বাঙ্গালীর বার্তা: ‘সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন’— এমন দলীয় ভাবনার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান— আপনারা একটু সর্তক থাকবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ উসকে দিতে চায়…। গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এই ধরনের বিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে।’
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকাল সাড়ে ৪টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। লন্ডন থেকে সমাবেশে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনও রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তবর্তীকালীন সরকারের কর্ম পরিকল্পনায় পথনকশা, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।’
‘নিঃশর্ত সমর্থন অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না’
তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।’
পলাতক স্বৈরাচার যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়, এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য অপরিহার্য মনে করে… জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে; তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।’
এই কারণে বলতে চাই, কোনও ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মনে বিনাভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত সুপ্ত ভাবনা মনের আকাঙ্ক্ষা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে, সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।’
‘গণবিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয়, তা ‘অবৈধ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয় এবং বিকল্প হতে পারে না’ বলেও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
মিয়ানমারে মানবিক করিডোর প্রসঙ্গ
তারেক রহমান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে লিপ্ত মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে জনগণের মতামত নেয়নি বা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেনি। তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা, তা বলতে চাই না। দেশের স্বার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ ধরনের স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের মতামত নেওয়া দরকার ছিল।’
‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে এটাই নিয়ম। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, বিদেশিদের স্বার্থ রক্ষা নয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার আগে দেশের স্বার্থ দেখতে হবে। মিয়ানমার, ভারত বা পাকিস্তান নয়, সবার আগে বাংলাদেশ।’
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর জচন্দ্র রায়, শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
দুপুর ২টায় শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরাও সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় নয়াপল্টন থেকে কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুলসহ আশপাশের সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।