বাঙ্গালীর বার্তা: ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগাম হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টা জবাবে রাতেই হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। বুধবার সকাল থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি চলেছে দুদেশের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর সীমান্তে বসবসকারী বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর গোলাবর্ষণ করেছে পাকিস্তান। এতে কমপক্ষে ১১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছে।
অবশ্য ভারতের সেনাবাহিনী বিবিসিকে জানায়, নিয়ন্ত্রণরেখাসহ ভারতে পাকিস্তানের হামলায় মোট ১৫ জন বেসামরিক ভারতীয় নিহত হয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, কাশ্মীর উপত্যকার উরি ও তাংধর সেক্টরে তীব্র কামানের গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেলেও জম্মুর পুঞ্চ শহরে সবচেয়ে ভয়াবহ গোলাবর্ষণ ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো সামরিক স্থাপনা ছাড়াও আবাসিক এবং সরকারি ভবন লক্ষ্য করে কামানের গোলা ছুড়েছে পাকিস্তান।
নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্তের কাছে থাকা অনেক বাসিন্দাকে লাসানা, সানাই এবং সাথরায় নির্ধারিত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যদিও পাকিস্তান অতীতে পুঞ্চ জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর মর্টার ও কামানের গোলাবর্ষণ করেছে, কিন্তু সীমান্তবর্তী শহরের ভেতরে, বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় এত গভীরে এর আগে কখনো গোলাবর্ষণ হয়নি।
পুঞ্চ জেলার গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি নরিন্দর সিং স্মৃতিচারণ করে বলেন, “২০১৯ সালে পুলওয়ামা সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারত পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোট এলাকায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর পর, পুঞ্চ শহরের উপকণ্ঠে বেতার নালার কাছে দুই-তিনটি পাকিস্তানি গোলা পড়েছিল।”
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের এবারের হামলায় জম্মুতে বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের কমপক্ষে পাঁচজন সদস্য নিহত হয়েছেন এবং স্থানীয় গুরুদ্বার সিং সভার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের হামলায় নিহত ১১ জনের মধ্যে দুই নারী ও চার শিশু রয়েছে। নিহত শিশুদের মধ্যে রয়েছে দুই বোন জোয়া খান (১৪) এবং জয়েন খান (১২)। কালানি গ্রামে পাকিস্তানের গোলা তাদের বাড়িতে পড়লে তারা নিহত হন। তাদের বাবা রমিজ খান আহত হন।
সিন্ডিকেট চকে এলাকায় দুই প্রতিবেশী দোকানদার- ৫৫ বছর বয়সী আম্রিক সিং ও ৪৮ বছর বয়সী রঞ্জিত সিং তাদের দোকানেই গোলার আঘাতে মারা যান।
নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপার থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে কাজী মহল্লায় নিজ বাড়ির প্রাঙ্গণে বসে থাকা সাত বছর বয়সী মরিয়ম খাতুন নিহত হন, গুলির স্প্লিন্টারে তার বোন ইরাম নাজ (১০) আহত হন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলির আঘাতে নিহত আরেক শিশুর নাম বিহান ভার্গব (১৩)। সে ডুঙ্গুস গ্রামের বাসিন্দা।
মেন্ধারের মানকোট এলাকায় বলবিন্দর কৌর (৩৫) নিহত হন এবং তার মেয়ে রবীন্দর কৌর (১২) আহত হন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে নিহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন অমরজিৎ সিং (৪৭), মোহাম্মদ আকরাম (৪০) এবং কাজী মোহাম্মদ ইকবাল। তারা সবাই পুঞ্চের বাসিন্দা।
ভারতের উত্তর কমান্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা (প্রতিরক্ষা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুনীল বারাতওয়াল বলেন, “৬-৭ মে রাতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের বিপরীতে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে অবস্থিত পোস্ট থেকে কামানের গোলা নিক্ষেপসহ নির্বিচারে গুলি চালায়।”
ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস বলছে, রাজৌরির লাম, মাঞ্জাকোট এবং গম্ভীর ব্রাহ্মণা ছাড়াও পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণা ঘাটি, শাহপুর এবং মানকোটে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ পাঁচটি সীমান্ত জেলা- জম্মু, সাম্বা, কাঠুয়া, রাজৌরি এবং পুঞ্চ- এর স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া জম্মু, শ্রীনগর এবং লেহ সহ সীমান্তের কাছাকাছি শহরগুলোর বিমানবন্দর কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি নরিন্দর সিংয়ের জানান, তারা কয়েক দশক ধরে এমন গোলাবর্ষণ দেখেননি।
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো এত তীব্র এবং অবিরাম গোলাবর্ষণ চালানো হয়েছে। তারা (পাকিস্তান সেনাবাহিনী) পুরো শহরকে লক্ষ্য করে…এমনকি গভীরেও গোলাবর্ষণ করেছে। গতকাল রাত দেড় টার দিকে এটি শুরু হয়েছিল এবং পরবর্তীতে আরো তীব্র হয়।”