বাঙ্গালীর বার্তা: নানা চাপ ও বাধা উপেক্ষা করে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করার ব্যাপারে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব থাকায় সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সে হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ্বেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা, নতুন দলেন নিবন্ধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও কেনাকাটাসহ ভোটের সব কার্যক্রম দ্রুতগতিতে চলছে। ৬০ দিনের মতো সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশন একদিকে নিজেদের প্রস্তুতি পুরোদমে সারছে এবং অপরদিকে সরকারের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছে।
ডিসেম্বরের আগেই আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হবে। যেকোনো সময় ভোটের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। সরকারের সিগন্যাল পেলেই আমরা তফসিল ঘোষণা করবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনার
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের দুটি তারিখ ৫ ও ১২ সামনে রেখে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে তারিখ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা হলো ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার)। কমিশন মনে করছে, এবার ব্যাপক হারে মানুষ ভোট দেবে। এজন্য ভোটের পর দুই দিন ছুটি রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফলে সপ্তাহের শেষ দিন ভোটগ্রহণ করতে চায় ইসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ কিন্তু এবার ভিন্ন। বিগত সময়ে যেভাবে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, এবার কিন্তু সেভাবে হবে না। আমরা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করব।’
নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, ‘ডিসেম্বরের আগেই আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হবে। যেকোনো সময় ভোটের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। সরকারের সিগন্যাল পেলেই আমরা তফসিল ঘোষণা করবো।’
*ডিসেম্বরের শুরু অথবা প্রথমার্ধ্বে তফসিল
*ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সারার টার্গেট
*মোতায়েন থাকবে ৬০ হাজার সেনা সদস্য
*ভোটের আগে দেড় লাখ পুলিশকে প্রশিক্ষণ
৫ বা ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের প্রস্তুতির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘সেভাবে আমরা কোনো তারিখ নির্ধারণ করিনি এখনো। তবে আলোচনা হয়েছে। তারপরও সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের একটা বিষয় আছে। সেদিক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসে কি না সেই বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে রমজানের আগে নির্বাচনটা হলে ভালো হয় বলে আমি মনে করি।’
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা সূত্র জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন মাসে কী কাজ হবে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। কাজ শেষ হলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যেকোনো দিন ভোটের তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।
ডিসেম্বরের শুরু অথবা প্রথমার্ধ্বে তফসিল
সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ্বে অনুষ্ঠিত হলে ডিসেম্বরের শুরু বা প্রথমার্ধ্বে তফসিল ঘোষণা করতে পারে বলে জানা গেছে।
ইসি সূত্র জানায়, ভোটের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ধরলে তফসিল ঘোষণা করতে হবে চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে। আর ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ ধরলে তা ২০ ডিসেম্বর মধ্যে করলেও হবে।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) তফসিল ঘোষণার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, সংবিধানে কোনো পরিবর্তন না এলে আগের নিয়মে এবং প্রচলিত পদ্ধতিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে, তখন নির্বাচনের তারিখসহ মনোনয়নপত্র জমাদানের সময়সীমা ও প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো হবে।
জানা যায়, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার হালনাগাদ, সীমানা নির্ধারণ (প্রায় চূড়ান্ত), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী আচরণ বিধিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালা, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), কেনাকাটা সবকিছু চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে ইসি।
ইতোমধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় শিগগির ঘোষণা করার কথাও রয়েছে।
গত সোমবার (২৮ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়ে এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিকত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেন।
ওই বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া নির্বাচনের আগে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রেস সচিব বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাসে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন ঘিরে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সরকার ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার’ গঠনের চিন্তাভাবনা করছে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই সেন্টারটি খুব দ্রুত গুজব শনাক্ত ও প্রতিরোধ করবে এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেবে। তিনি বলেন, এই কেন্দ্রটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইতিবাচক ও তাৎক্ষণিক কর্মকাণ্ড প্রচারে সাহায্য করবে, যেগুলো বর্তমানে প্রচার না পাওয়ায় অনেক সময় অজ্ঞাতই থেকে যায়।