বাঙ্গালীর বার্তা: বিরোধীদের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র দিল্লি। তুমুল ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, আরামবাগের সাংসদ মিতালি বাগ। দিল্লি পুলিশের তরফে গ্রেপ্তার করে বাসে তোলা হয়েছে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গেসহ ১০০-এর বেশি সাংসদকে।
ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের নামে ‘ভোটচুরি’র অভিযোগ তুলে সোমবার দিল্লিতে উত্তাল বিক্ষোভে নামেন ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা। সকাল সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু হয়। তবে মিছিলের অনুমতি না দিয়ে দিল্লি পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে দেয়।
প্রতিবাদে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বিরোধী নেতারা। তৃণমূল সাংসদদের হাতে ছিল বাংলায় লেখা ব্যানার। ব্যারিকেড টপকাতে দেখা যায় মহুয়া মৈত্র, সুস্মিতা দেবসহ কয়েকজনকে। সপা নেতা অখিলেশ যাদব, ভূপেন্দ্র যাদবও ব্যারিকেড পেরোনোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্লোগান ওঠে—‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, নরেন্দ্র মোদি চোর হ্যায়’।
বিক্ষোভের মধ্যে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও অংশ নেন। পুলিশি বাধার মুখে অনেক সাংসদ রাস্তায় বসে পড়েন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে রাহুল, প্রিয়াঙ্কাসহ বহু সাংসদকে গ্রেপ্তার করে পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গ্রেপ্তারের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও আরামবাগের সাংসদ মিতালি বাগ। বাসে ওঠার পর মহুয়া জ্ঞান হারান বলে জানা গেছে। দুজনের দেখভাল করেন রাহুল গান্ধী।
এ ঘটনায় রাহুল গান্ধী বলেন, “সরকার কথা বলতে চায় না, মুখ লুকোচ্ছে। এটি রাজনৈতিক লড়াই নয়, সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। আমরা সঠিক ভোটার তালিকা চাই।” প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, “বিজেপি ভয় পেয়ে পুলিশ দিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করছে।”
বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা জালিয়াতি ও প্রভাবিত করার মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ প্রথম জোরালো হয় গত বছরের মহারাষ্ট্র নির্বাচনের পর। কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) ও এনসিপি (শরদ পওয়ার গোষ্ঠী) নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা বদলে বিজেপির জয় নিশ্চিত করার অভিযোগ এনেছে।
তারা বলছে, মহারাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে অস্বাভাবিক সংখ্যক নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। পরে কর্নাটকের লোকসভা নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ ওঠে।
অন্যদিকে বিজেপি অভিযোগ নাকচ করে সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “গোটাটাই সাজানো নাটক। বিরোধীরা এখনো পর্যন্ত একটি অভিযোগের পক্ষেও প্রমাণ দিতে পারেনি।”
অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, তাদের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগের বিরুদ্ধেও তীব্র ভাষায় সওয়াল করেছে, তাকে হলফনামায় স্বাক্ষর করে প্রমাণসহ দাবি জানানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছে।