বাঙ্গালীর বার্তা: বগুড়ায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত পূর্বনির্ধারিত সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ’এর ব্যানারে একদল যুবক এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উদীচীর। এতে উদীচী ও সমমনা সংগঠনের সাত নেতাকর্মী আহত হন।
বুধবার (১৪ মে) বিকালে শহরের সাতমাথা ও শহীদ খোকন পার্কে দুই দফায় এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- বগুড়া সিপিবির সভাপতি জিন্নাতুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাওন পাল, ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভ শংকর গুহ রায়, সিপিবির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ঝিলাম, শামীম হোসেন জুয়েল ও আকাশ।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আতোয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পুলিশ অবস্থান নেওয়ায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’
বগুড়া উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক শাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বারবার আমাদের জাতীয় সংগীতকে নিয়ে যড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। লাখো শহীদের রক্তে লেখা আমাদের ইতিহাসে এ ধৃষ্টতা মেনে নেওয়া যায় না। জাতীয় সংগীত গাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার এই অপচেষ্টাকে রুখতে বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টা দিকে শহরের সাতমাথায় মুক্তমঞ্চে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশেনের কর্মসূচি দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে নেতাকর্মীরা মুক্তমঞ্চে এসে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় “ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসে বাধা দেন। তখন পুলিশের পরামর্শে আমরা পাশেই আমাদের সংগঠনের কার্যালয়ে যাই। সেখানেও বাধা পেয়ে শহীদ খোকন পার্কে সমবেত হই। কর্মসূচিতে উদীচীর সভাপতি সোবহান মিন্নু, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বায়েজিদ রহমান, যুব ইউনিয়নের সভাপতি ফারহানা আকতার শাপলাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।’
শাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘শহীদ খোকন পার্কে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত শুরু হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের লোকজন সেখানে এসে ভুয়া-ভুয়া, ভারতের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান, র-এর দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান, আগস্টের দালালরা, হুঁশিয়ার-সাবধান, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদিসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এর প্রতিবাদ জানালে ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের লোকজন হামলা চালান। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে তারা মারধর শুরু করলে সিপিবির সভাপতি জিন্নাতুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাওন পাল, ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভ শংকর গুহ রায়, সিপিবির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ঝিলাম, শামীম হোসেন জুয়েল ও আকাশ আহত হন। এরপর পুলিশের উপস্থিতিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের লোকজন উদীচী কার্যালয়ে হামলা চালান। তারা সংগঠনের সামনের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে। তবে পুলিশের বাধার কারণে কার্যালয়ে ভাঙচুর করতে ব্যর্থ হন। ২০ মিনিট পর ফিরে আসার ঘোষণা দিয়ে মঞ্চের নেতাকর্মীরা চলে যান। পরে ঘটনাস্থল ও আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আহতদের আমরা উদ্ধার করি নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।’
ঘটনার পরপরই ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের লোকজন চলে যাওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মঞ্চের দুজন নেতাকে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।