বাঙ্গালীর বার্তা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ শনিবার রাতে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ। বৈঠকে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আজ রাত সাড়ে ৭টায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে আমরা চারজন এসেছিলাম। আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদেরকে আগে জানানো হয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা যা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসেছি এবং সেই লিখিতটি আমরা প্রধান উপদেষ্টার সমীপে পেশ করেছি এবং সেই ভিত্তিতে আমরা আলোচনা করেছি। তার একটি সারাংশ আপনাদের (সাংবাদিকদের) সামনে তুলে ধরতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি শুরু থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। আপনারা জানেন, আমরা এটি প্রকাশ্যভাবে দাবি করে আসছি। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্যৗ বলেন, ‘বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এ জন্য আওয়ামী লীগের বিচার দাবি সবচেয়ে বেশি বিএনপির। এই বিচারপ্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পূর্ণ থেকে গেলে, বিএনপি সরকারের দায়িত্বে গেলে বিচারের আওতায় এনে তা স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে যে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে দ্রুত সম্পন্ন করা। যে কোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, আমরা মনে করি জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ওপরে বর্তাবে।’
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি যে নানা ধরনের গুজব প্রচলিত আছে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, বরঞ্চ প্রথম দিন থেকেই সরকারকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে আসছে।’
কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের আশ্বাস পেয়েছেন কি না, আপনারা যে দাবি জানিয়েছিলেন। উনারা কী বলেছেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনার মধ্যে আসছে সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন- মূল। আমরা বলেছি, একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নাই। কেননা সংস্কার চলমান বিষয়, এটা চলতে থাকবে। আমরা আশা করেছি, এই সরকার সকলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সংস্কার প্রস্তাব দেবে। সেইটা চলমান থাকবে, এবং আমরা যদি, জনগণ যদি আমাদের ক্ষমতায় বসায় আমরা সেই সংস্কার চলমানভাবে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা নেব।’
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আর মামলাগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে আমরা এবং সেই তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বিক্ষুব্ধ। আমরাই এই স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের এবং যারা দায়ী, তাদের বিচার চাই। অতএব আমরা তো বিচারের পক্ষে। তবে বিচারব্যবস্থাও যে স্বাধীন চাই আমরা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এই বিচার সম্পন্ন করবে। এটাও কোনো দিন-তারিখ ঠিক করে দেওয়া সম্ভব না। আমরা বলেছি, যেগুলো সম্পন্ন না হবে সেগুলো যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায় তাহলে বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে এই বিচার সম্পন্ন করা হবে।’
তার মানে আপনারা আজকেও কোনো আশ্বাস পান নাই- সুনির্দিষ্টভাবে রোডম্যাপের- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘স্পেসিফিক (নির্দিষ্টভাবে) উনারা জানান নাই। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া জানিয়েছি। হয়তো উনারা উনাদের প্রেসের (প্রেস ব্রিফিং) মাধ্যমে জানাবেন।’
আজকের আলোচনা করে সন্তুষ্ট কি না, জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নাই। উনাদের প্রেস সেকশন দেখি কী বলে। তারপর আমরা প্রতিক্রিয়া জানাব।’
যতটুকু হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মূলত সংস্কার, বিচার, নির্বাচন- এই তিনটার ওপর আলোচনা হয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার এবং উনারা একমত হয়েছেন সংস্কার যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে এবং সেই কাজ অতি সহসা সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেন নাই। বিচার বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, এখানেও উনাদের কোনো দ্বিমত নাই। সুতরাং ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব। এই আলোচনাও হয়েছে সেখানে।’
কিছু উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পদত্যাগের বিষয়ে আগেও আমরা লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দুজন ছাত্র উপদেষ্টা, যাদের কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও আমরা লিখিত বক্তব্যে দিয়েছি।’
উনারা কোনো আশ্বাস দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই আশ্বাস উনারা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।’
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘যে তিনটি বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি, আপনারা শুনেছেন, সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি, একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নেই এবং যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয়, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি, আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, এক অ্যানাউসমেন্টের (ঘোষণার) ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের শান্তি, শৃঙ্খলা এবং গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’