আন্তর্জাতিক বার্তা: কলকাতার আইন কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ঘটনা দক্ষিণ কলকাতার কসবায় অবস্থিত ‘সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ’ ক্যাম্পাসের।
কসবা থানায় বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা ওই তরুণী। ঘটনায় তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে কসবা থানার পুলিশ।
জানা গেছে অভিযুক্ত তিনজনই শাসক দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র নেতা। তাদের একজন আবার মমতার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট। এমন ঘটনা সামনে আসার পর রাজনৈতিকভাবেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে রাজ্যটিতে।
২৪ বছর বয়সী নির্যাতিতা তরুণীর অভিযোগ, কলেজ ভর্তি সম্পর্কিত ফর্ম আবেদনপত্র জমা দিতে বুধবার, ২৫ জুন দুপুর ১২টা নাগাদ তিনি কলেজে যান। কলেজের ইউনিয়ন রুমে বসেছিলেন তিনি। একসময় সন্ধ্যার দিকে মূল অভিযুক্ত কলেজের প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর রুমে নিয়ে গিয়ে তাকে গণধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার তালবাগান ক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র (৩১) ও তার সহযোগী জাহিব আহমেদকে (১৯)। তৃতীয় অভিযুক্ত প্রতিম মুখোপাধ্যায়কে (২০) বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ নাগাদ তার হাওড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তিনজনেরই মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত মনোজিৎ আবার রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।
নির্যাতিতা ওই তরুণী অভিযোগ পত্রে জানান- অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। জবাবে ওই প্রস্তাব নাকচ করে তরুণী জানান তার বয়ফ্রেন্ড রয়েছে। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নেয় মনোজিৎ। ঘরের মধ্যে আটকে রেখে ওই তরুণী এবং তার বয়ফ্রেন্ডকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি তার বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করার হুমকিও দেওয়া হয়। প্রধান অভিযুক্ত মনোজিতের পা ধরে অনুরোধ জানালেও তাতে কাজ হয়নি। নিরাপত্তা রক্ষীর রুমে জোর করে তাকে আটকে রাখা হয়। পরে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এই কাজে তাকে সহায়তা করে আইন কলেজেরই দুই শিক্ষার্থী জাহিদ এবং প্রতিম।
ওই তরুণী অভিযোগ পত্রে আরো জানান, বখাটেরা তাকে হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করেছিল। তাই চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে পালাতে পারেননি তিনি।
বৃহস্পতিবার তিন অভিযুক্তকেই কলকাতার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হলে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যেই নির্যাতিতা তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে। নমুনা সংগ্রহে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে ফরেনসিক টিম। ইতিমধ্যেই কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্তের আইনজীবী আজম খান বলেন, “যেরকমভাবে ঘটনাটি প্রচার করা হচ্ছে আদেও তা নয়। কলেজে ছাত্র রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আমার মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট কলকাতার সরকারি আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনা গোটা দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রায় এক বছর হতে চললেও নির্যাতিতার পরিবার এখনো ন্যায় বিচার পায়নি।
ওই ঘটনার পরেই কলকাতা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। যদিও সরকারের বক্তব্য- নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তারই মধ্যে ফের কলকাতার বুকে আবারো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটলো!