আন্তর্জাতিক বার্তা: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও কামানের গোলাবর্ষণে গতকাল সোমবার অন্তত ৯৭ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্থানীয় সূত্রগুলোর বরাতে এ খবর দিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে জেইতুন, শেজাইয়া ও আল-তুফাহ এলাকায় বিমান হামলার পাশাপাশি কামানের গোলাবর্ষণও বাড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্র অনুসারে, সেনাবাহিনী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল চারটি স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে তিনটি জেইতুন পাড়ায় এবং একটি গাজা শহরের পূর্বে আল-তুফাহ পাড়ায়।
সর্বশেষ হামলায়, গাজা শহরের সমুদ্র সৈকতে একটি ক্যাফে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাজা শহরের পশ্চিমে সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত ওই ক্যাফেতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান কমপক্ষে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, এতে ক্যাফেটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
গাজা শহরের পশ্চিমে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে বেসামরিক মানুষদের একটি দলকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার পর, অন্তত পাঁচ জনের মরদেহ আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে বলে একটি মেডিকেল সূত্র আনাদোলুকে জানিয়েছে।
মধ্য গাজার আল-আওদা হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা এলাকার দক্ষিণে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটে ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন।
চিকিৎসা সূত্র অনুসারে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুুতদের তাঁবু লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়ে একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন।
গাজা শহরের সাবরা পাড়ায় একটি বাণিজ্যিক গুদাম লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ১০ জন ফিলিস্তিনির দেহের খণ্ডিত অংশ এবং বেশ কয়েকজন আহতকে আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে আনা হয়েছে। একটি মেডিকেল সূত্র আনাদোলুকে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাণিজ্যিক গুদামটি দাতব্য সংস্থাগুলো গাজার বাসিন্দাদের জন্য মানবিক সাহায্য গ্রহণ ও বিতরণের জন্য ব্যবহার করে।
এদিকে, গাজা শহরের জেইতুন পাড়ার আল-সিক্কা স্ট্রিটে ইসরায়েলি হেলিকপ্টার বোমা ফেলার পর একজন নারীর মরদেহ এবং আহত বেশ কয়েকজনকে ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে আনা হয়েছে, একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, একই এলাকার একটি পেট্রোল স্টেশনের কাছে ড্রোন হামলায় আরো একজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন।
সূত্র অনুসারে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শহরে একদল ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর হাসপাতালে চারজনের মরদেহ আনা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
নাসের হাসপাতালের মেডিকেল সূত্র আনাদোলুকে জানিয়েছে, পৃথকভাবে, কাতিবাতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নারীসহ তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
খান ইউনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমে ত্রাণকর্মীদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরো ১৩ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরো একজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজা শহরের মধ্যাঞ্চলে আল-সাহাবা মেডিকেল কমপ্লেক্সের কাছে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরো একজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন।
গাজা শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আল-তুফাহ পাড়ায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় আরো তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, গাজা শহরের মধ্যাঞ্চলে আল-ওয়াহদা স্ট্রিটে একটি ড্রোন জনতার উপর হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
একই এলাকায়, গাধার গাড়িতে আরেকটি হামলায় চার ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
পূর্ব গাজা শহরের শেজাইয়া পাড়ায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় আরো দুজন নিহত হয়েছেন।
উত্তর গাজার জাবালিয়ার হালাওয়া মোড়ের কাছে বেসামরিক মানুষদের একটি দলকে লক্ষ্য করে পৃথক হামলায় আরো তিনজন নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান সত্ত্বেও, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫৬,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।