বাঙ্গালীর বার্তা: দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা গত বছরের এই দিনে লাল রঙে রঞ্জিত করে নিজেদের প্রোফাইল। কোটি কোটি ব্যবহারকারীর এই প্রতিবাদ নাড়িয়ে দেয় শাসকের মসনদ। এর আগে নিহতদের স্মরণে গত বছরের ৩০ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু শোকের সেই কালো রঙের বিপরীতে মুখ-চোখে লাল কাপড় বাঁধা ছবি দিয়ে অনলাইনে প্রচার কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এতে সংহতি জানিয়ে কোটি মানুষ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ নিজ প্রোফাইলে লাল রঙের ছবি আপলোড করেন।
৩০ জুলাই, ২০২৪। রক্তাক্ত জুলাইয়ে এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন শত শত মানুষ। আহতের সংখ্যা অজানা-অজস্র। যার দায় সরকার ও তার পেটোয়া বাহিনীর। এইরকম একটি সময়ে দাঁড়িয়ে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে ‘রাষ্ট্রীয় শোকের’।
তবে শোকের সেই ঘোষণাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এদেশের আপামর জনতা। কোটি মানুষ এদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের প্রোফাইল রাঙিয়ে তোলে বিপ্লবের লাল রঙে।
হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিলে নামে জনতা। শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেন বিক্ষোভে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবকদের পাশাপাশি প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিশিষ্ট নাগরিকরাও। এদিন জনসমক্ষে হতাহতের জন্য সরকারের কাছে জবাবদিহিতা দাবি করেন তারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমরা এসময় নতুন নতুন কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কখনো কখনো চোখমুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ, মার্চ ফর জাস্টিসের মতো কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল। যার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলাম।
এছাড়াও কারফিউ তুলে নেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের পদত্যাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া, আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত কমিশন করে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারসহ ১১ দফা দাবি জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের ফোরাম-সাদা দল।
বাংলাদেশের সহিংস পরিস্থিতি ও গণগ্রেফতার নিয়ে এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস। এদিকে, ৬ সমন্বয়ককে কোন আইনে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছিল তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এতো সহিংসতায় আদালত লজ্জিত বলেও জানায়।
তবে এতকিছুর মাঝে সরকার তখন ব্যস্ত জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কাজে। সরকারের তিন মন্ত্রীই জানান পরদিনের মধ্যেই নিষিদ্ধ হবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে এই অপশক্তি যেন আর কোনো সুযোগ না পায়।’
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এই দলটিকে নিষিদ্ধ করা হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও রাজনীতিতে দৃশ্যমান উন্নতি হবে।’ অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘জঙ্গি উত্থান ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জামায়াত ইসলামী সক্রিয়ভাবে জড়িত। তাই ১৪-দলীয় জোটসহ রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে দলটিকে নিষিদ্ধ করার এবং সেই প্রক্রিয়া এখন চলমান।’
এদিকে পরদিন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা জানায়, ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে পালিত হবে এ কর্মসূচি।