বাঙ্গালীর বার্তা: জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা সাদিক কায়েম আন্দোলনের ‘হিস্যা চাওয়াতেই সব সমস্যা’ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের।
এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, সাদিক কায়েম সমন্বয়ক ছিলেন না।
“৫ই অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কায়েমকে ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়।”
এদিন সন্ধ্যায় সে প্রসঙ্গের ইঙ্গিত করে নিজের ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে কাদের লিখেছেন, “সাদিক কায়েম ভাই কখনো চাঁদাবাজি করছে বলে আমি শুনি নাই; কিন্তু তিনি শুধু ক্ষমতার হিস্যাটাই চেয়েছেন। অভ্যুত্থানে তাদের অবদান, ত্যাগ অনুযায়ী হিস্যা বুঝে পেতে চেয়েছেন। সব সমস্যার মূল হচ্ছে এই ‘যথাযথ হিস্যা না পাওয়া’।”
কাদের বলেন, “অভ্যুত্থান পরবর্তীতে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে ঢাবি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) শিবিরের একজন সাবেক সভাপতি এবং এক শিবির নেতার বউ মূলত এই হিস্যার বিষয়টা ডিল করতেন। সচিবালয় থেকে মন্ত্রণালয়, আমলাতন্ত্রের সব জায়গায় নিজেদের মতাদর্শী লোকজন বসানোর ক্ষেত্রে লিয়াজোঁ করেছেন মূলত এই দুই ব্যক্তি (আমি যতদূর জানি)।”
তিনি দাবি করেন, “শুরুতে সবকিছু ভালোই চলছিল, কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো কিছুদিন পরে। ঐ দুই ব্যক্তি সচিবালয় ঘুরে ঘুরে আসিফ নাহিদের নাম বলে বিভিন্ন ব্যক্তির বিষয়ে সুপারিশ করতেছেন, সেটা আবার আসিফ নাহিদকে না জানিয়েই।
“অভ্যুত্থান পরবর্তীতে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে ঢাবি শিবিরের একজন সাবেক সভাপতি এবং এক শিবির নেতার বউ মূলত এই হিস্যার বিষয়টা ডিল করতেন,” বলেছেন তিনি।
“বিষয়টা সমীচীন মনে করে নাই আসিফ-নাহিদ। কারো কনসার্ন ছাড়া এইভাবে নাম বিক্রি করা সঠিক মনে করেন নাই তারা। পরবর্তীতে লিয়াজোঁ করা জাশি’র (জামায়াত-শিবির) ঐ দুই ব্যক্তির নামে মন্ত্রণালয়গুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। আসিফ, নাহিদের নাম ভাঙ্গিয়ে এই দুই লোক তদবির করতে আসলে যেন গ্রহণ করা না হয়, চিঠিতে এই মর্মে অনুমতি দেওয়া হয়।”
পোস্টে কাদের বলেছেন, “তার পরপরই সাদিক কায়েম ভাই এক রাতে আমাকে ফোন দিলেন, দেখা করতে চান। সন্ধ্যা থেকে রাত চারটা পর্যন্ত বার্তা দিলেন, আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ছিলাম। কিন্তু ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে ঐদিন রাতেই দেখা করতে হল। চারটায় ভিসি চত্বরে দেখা করলাম। কথা চলল ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়-যায় পর্যন্ত।
“সাদিক ভাইয়ের একটাই অভিযোগ-অনুযোগ, তারা কি না করছে! অভ্যুত্থানে এত এত অবদান, ত্যাগ; তারপরও তাদের প্রতি এখন অবিচার করা হচ্ছে। মাহফুজ-নাহিদ-আসিফরা এখন তাদের কথা শুনতেছে না, তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতেছে। মাহফুজরা কথা রাখে নাই!”
এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্র শিবির বা সাদিক কায়েমের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি ইসলামী ছাত্র শিবির। তবে জামায়াতে ইসলামীর এ ছাত্র সংগঠন যে গোপনে ঠিক সক্রিয় ছিল, তা প্রকাশ্যে আসে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সাদিক কায়েম ২১ সেপ্টেম্বর এক ফেইসবুক পোস্টে জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি।
সমন্বয়কের তালিকায় নাম না থাকলেও জুলাই মাসে চলা ছাত্র আন্দোলনে সামনের কাতারেই ছিলেন সাদিক কায়েম। তালিকায় নাম থাকা সমন্বয়কদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতেও তাকে দেখা যায় সে সময়।
সম্প্রতি একটি টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে সাদিক কায়েম বলেন,২০১৭ সাল থেকে লম্বা সময় ধরে যখন তার যে পদ ছিল, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আর মাহফুজ আলমরা তা জানতেন।
“পরিচয় জেনে কো-অর্ডিনেশন করে আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করেছি। সুতরাং এখানে পরিচয় গোপন করার কিছু নেই। ওই সময়ে পরিচয় ঘোষণা দিয়ে কাজ করার মত পরিস্থিতি ছিল না যে কারণে শিক্ষার্থীদের সকল দাবির সাথে ছিলাম কিন্তু ঘোষণা দিয়ে কাজ করার মতো অবস্থা ছিল না। কারণ আমাদের মেরে ফেলা বৈধ ছিল।”
তিনি এও বলেন, “যখন ছাত্র অধিকার পরিষদ হল, এরপরে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিলুপ্তি। যখন ক্যাম্পাসে কিছু নেই, ছাত্রশক্তি গঠন প্রক্রিয়া। এ গঠন প্রক্রিয়ার সাথে আমরা সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এবং এটা নিয়ে দফায় দফায় আমাদের মিটিং হয়েছে।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূচনাপূর্ব নিয়ে তার ভাষ্য, “৫ জুন নাহিদ আসিফ মাহফুজ ওরা আমাকে ফোন করেছে আন্দোলনের বিষয়ে কী করা যায়। আমরা যেভাবে ডিরেকশন দিয়েছি সেই কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে কাজগুলো হয়েছে। তারা ব্যক্তি সাদিক কায়েমের কাছে আসেনি। তারা ঢাবি শাখা শিবিরের সভাপতির কাছে এসেছিল।”
তবে জুলাই অভ্যুত্থানের শুরুতে শিবির নেতা সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের কোনো পর্যায়ে ছিলেন না দাবি করেন নাহিদ ইসলাম।
অভ্যুত্থানে শুধু শিবির নেতৃত্ব ‘দেয়নি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সাদিক কায়েমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে, এই অভ্যুত্থানে ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম।
“অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু, এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম।”