বাঙ্গালীর বার্তা: ‘‘বন্ধুত্ব গড়তে ধীর গতির হও। কিন্তু বন্ধুত্ব হয়ে গেলে প্রতিনিয়ত তার পরিচর্যা করো।’’— উক্তিটি সক্রেটিসের। সত্য কথা বলতে বন্ধুত্ব বাঁচে পরিচর্যায়। এ এমন এক সম্পর্ক যাকে অবহেলায় ফেলে রাখলে চলে না। আজ বিশ্ব বন্ধু দিবস।
কবে, কখন এই দিনটি প্রচলন হয়েছিলো তা নিয়ে নানা মত আছে। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো, ‘‘১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক বন্ধুর আত্মত্যাগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ ঘোষণা করে মার্কিন কংগ্রেস। এরপর ২০১১ সালে জাতিসংঘ ৩০ জুলাইকে বিশ্ব বন্ধু দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।’’
বাংলাদেশে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার দিবসটি পালিত হয়। আবেগ-ভালোবাসায় পালিত হয় এই দিন। বন্ধুরা একে অপরকে উপহার দেন, একসঙ্গে সময় কাটান, স্মৃতি রোমন্থন করেন।
জানা যায়, এই দিবসটি বাণিজ্যিক কারণে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ১৯৩০ সালের ২ আগস্ট বিশ্বখ্যাত উপহারসামগ্রী ও কার্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হল বন্ধু দিবসের আয়োজন করেন। ওই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিলো যেন সবাই একসঙ্গে মিলে বন্ধুত্বের উৎসব পালন করতে পারেন।
কার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে বন্ধু দিবস পালন করার চল শুরু হয়। যদিও আয়োেজনের পেছনে ছিলো-জয়েসের গ্রিটিংস কার্ড বিক্রির একটি কৌশল।
বন্ধু দিবস উদযাপন করার বিষয়ে বিশ্বের একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সময়ে-সময়ে উদ্যোগ নিয়েছে। ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্ব দিবস পালনের চিন্তা ডা. রামন আর্টেমিও ব্রাকোর মাথায় আসে। তিনি প্যারাগুয়ে শহরের পুয়ের্তো পিনাস্কোয়ে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে নৈশভোজে বসেছিলেন তিনি। আর তিনিই বন্ধুদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন মেরি গ্রুপ ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড।
এই সংস্থাটি জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ নির্বিশেষে নিঃস্বার্থ ও মানবদরদী বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরপর ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রসংঘ তৎকালীন সাধারণ সচিব কফি আনানের স্ত্রীর নাম ন্যান লেগারগ্রেন উইনি দ্য পু কার্টুন চরিত্রকে বন্ধুত্বের দূত হিসেবে চিহ্নিত করেন।
১৯৫৮ সালের ৩০ জুলাই প্রথম ফ্রেন্ডশিপ ডে উদযাপিত হওয়ার পর ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলি অব দ্য ইউনাইটেড নেশন’ ২০১১ সালের ৩০ জুলাই দিনটি আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ। মূলত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম ইত্যাদি নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশের মানুষের বন্ধুত্বের একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস ঘোষণা করে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও দিবসটি উদযাপন করা হয়। বন্ধু দিবসে বন্ধুদের ফুল, কার্ড, রিস্ট ব্যান্ড ইত্যাদি উপহার দিয়ে বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করা হয়ে থাকে। একেক দেশে একেক তারিখে বন্ধু দিবস পালিত হয়।
বাংলাদেশে আজ সেই দিন। এই দিনে যেসব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না, আজ দেখা করতে পারেন। যাদের সঙ্গে কথা হয় আজ কথা বলতে পারেন।
বন্ধুত্ব মানে চির সবুজ এক সম্পর্ক । যা সময় গড়িয়ে গেলেও পুরোনো হয় না। বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস আমাদের সবাইকে বন্ধুত্বের শক্তিকে মনে করিয়ে দেয়। এই দিবসটি বুঝিয়ে দেয় যে মানবতা আমাদের সবার। বন্ধুত্ব হলো সেই শক্তি যার মাধ্যমেই একটি শান্তিপূর্ণ ও সংযুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব।