বাঙ্গালীর বার্তা: আজ ২২শে শ্রাবণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বৈচিত্র্যময় শিল্প সৃষ্টি, সংগীত ও সাহিত্য দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজও বাঙালির জীবনের অনেকটা জুড়ে রবীন্দ্রনাথ। তাঁর সৃষ্টিকর্ম নানাভাবে বাঙালির জীবনকে সমৃদ্ধ করছে।
বিশ্বকবির সৃষ্টির পথ ধরেই বাঙালি ও বাংলাভাষীরা বিশ্ব সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল আয়োজনে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলছেন।
বাংলা সাহিত্যের এই অসামান্য প্রতিভা বাংলা ১২৬৮ সনের ২৫শে বৈশাখ (ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭ মে) পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২শে শ্রাবণ (১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট) কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাঙালির জীবনে তাই ২২শে শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও প্রকৃতির পঙক্তির মতোই—‘শ্রাবণের বারিধারা ঝরিছে বিরামহারা, বিজন শূন্য-পানে চেয়ে থাকি একাকী।
বাংলা ১৩৪৮ সনের শ্রাবণ মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন রবীন্দ্রনাথ। ৩০ জুলাই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। ঠাকুরবাড়িতে রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে তিনি বলতেন, তাঁর মুখে বলা সেইসব রচনার অনুলিপিকার ছিলেন রবীন্দ্র স্নেহধন্যা বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও লেখিকা রানী চন্দ।
মহাপ্রয়াণের মাত্র দিন কয়েক আগে এভাবেই লিখিত হয়েছিল তাঁর শেষ কবিতা, ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি’।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, সমাজসংস্কারক ও দার্শনিক। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্যের সীমা ছাড়িয়ে শিক্ষা, দর্শন, পল্লী ও কৃষি উন্নয়নের মতো নানা বিষয়ে তিনি নিজের মনীষা ও বহুমুখী চিন্তার স্বাক্ষর রেখেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, কবিতা ও সাহিত্যকর্ম বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিভিন্নভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
তাঁর ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
বিশ্বকবির ৮৪তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করবে।
রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানটে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনটি সবার জন্য উন্মুক্ত। ছায়ানটের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী কালের কণ্ঠকে জানান, অনুষ্ঠানে গীতি আলেখ্যসহ নানা আয়োজন থাকছে।
এদিকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনারকক্ষে হবে অনুষ্ঠানটি। এতে মূল বক্তা থাকবেন গবেষক ও সমালোচক অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনা করবেন কবি ও লেখক ড. মাহবুব হাসান, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান হাবিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ও বাংলা একাডেমির সচিব মো. সেলিম রেজা। বিকেল ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকছে আবৃত্তি ও রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনা।