বাঙ্গালীর বার্তা: বরিশালের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অপসো স্যালাইন (ওএসএল) ফার্মা লিমিটেডের প্রায় ৫০০ শ্রমিক-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় নগরীর বগুড়া রোডের ওএসএল ফার্মার সামনে বিক্ষোভ করেছেন তারা। ছাঁটাই হওয়া সবাই কোম্পানির স্টেরিপ্যাক ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ছিলেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, কোনো কারণ ছাড়াই তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক ও এইচআর বিভাগের ইনচার্জ।

তারা জানান, সবার পরিবার আছে, সংসার আছে। কোনো কারণ ছাড়াই চাকরি থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হয়েছে। এখন এই পরিবারগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। নোটিশ প্রত্যাহার করে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে যোগদানের সুযোগ না দিলে পুরো কোম্পানি অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শ্রমিকদের দেওয়া নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ওএসএল ফার্মা লিমিটেডের বগুড়া রোডে অবস্থিত ফ্যাক্টরিতে স্টেরিপ্যাক ডিপার্টমেন্টে কর্মরত সব শ্রমিক-কর্মচরীদের অবহিত করা যাচ্ছে যে, কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে স্টেরিপ্যাক ডিপার্টমেন্টের উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ২৬(৩) ধারার বিধান অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখ হতে স্টেরিপ্যাক ডিপার্টমেন্টের সকল শ্রমিক-কর্মচরীদের চাকরি অবসান করা হলো। একই সঙ্গে বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী অবসানকৃত শ্রমিক-কর্মচারীদের চূড়ান্ত পাওনা আগামী ২০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী মো. সামসু জানান, বুধবার দুপুরে তাকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পর থেকে কীভাবে পাঁচ সদস্যের সংসার চলাবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার কথা জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে অপসো কোম্পানির অফিসে ফোন করা হলেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির রুপাতলী শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে স্টেরিপ্যাক ডিপার্টমেন্টের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছঁটাই করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডাক্তার মনিষা চক্রবিত্তি জানান, শ্রমিকদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। মনিষা বলেন, “কথায় কথায় শ্রমিক ছাটাই বন্ধ করতে হবে। কর্ম ক্ষেত্রে চাকরির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। অপসো ফার্মার এ ধরনের অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমরা অবিলম্বে চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে বহালের দাবি জানাচ্ছি।”
বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালন শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডলকে ফোন করা হলে তিনি মিটিংএ রয়েছেন বলে জানান।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “বিক্ষোভের শুরুতে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ হলেও পরে তা স্বাভাবিক করা হয়। সেনাবাহিনীর সহায়তায় কর্তৃপক্ষ ও বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।”