বাঙ্গালীর বার্তা: কক্সবাজারের টেকনাফের একটি ব্রিজের নিচ থেকে মোহাম্মদ ইউনুস সিকদার (৪৫) নামের এক সাবেক ইউপি সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত ইউনুস সিকদার টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য এবং আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদ টেকনাফ উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলেন।
পরিবারের দাবি, বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আটকে রাখা হয় ইউনুসকে। এরপর ৭০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরে সকালে ফেরত দেওয়ার কথা বললেও, ব্রিজে মিলে লাশ।
এ বিষয়ে নিহত সাবেক মেম্বার ইউনুসের স্ত্রী কহিনুর আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে দাওয়াতের কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে আলম শফুর গ্রুপ। তাদের সঙ্গে তার কোনো টাকার লেনদেন ছিল না। তারা সকালে স্বামীকে জীবিত ফেরত দেবে বলেছিল, সকালে পেলাম শুধু লাশ। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।

নিহতের এর স্ত্রী
এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদ টেকনাফ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলম শফুর মিয়ার বাড়িতে আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন ইউনুস সিকদার। পরদিন বুধবার সকাল ৮টার দিকে রঙ্গিখালীর ব্রিজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
টেকনাফ থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে টেকনাফ পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের সভাপতি ইউনুস সিকদারকে মঙ্গলবার রাতে কমিটির বিষয়ে কথা হবে বলে রঙ্গিখালীর শফুর মিয়ার বাড়িতে ডাকা হয়। সেখানে তাকে হত্যা করে মরদেহ ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকেই শফুর মিয়া পলাতক। শুনেছি তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৭০ লাখ টাকাও দাবি করেছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, নিহত ইউনুস সিকদার নিয়মিত সবুর মিয়ার বাড়িতে যেতেন। সম্প্রতি ইয়াবা সংক্রান্ত পাওনা টাকার বিরোধ নিয়ে মো. আলম শফুর মিয়া, আবছার উদ্দিন, আনোয়ার হোসাইন (লেটাইয়্যা) ও মিজানুর রহমান (বাড়ু মিজান) ও কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে মারধর করা হয় বলে স্থানীয়দের ধারণা। এরপর মরদেহ ব্রিজের নিচে ফেলে রেখে ঘরে তালা ঝুলিয়ে সবাই পালিয়ে যায়।
নিহতের বড় ছেলে মোহাম্মদ ফারদিন বলেন, বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাবাকে আটকা রাখা হয়। এরপর ৭০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মো. আলম শফুরের বাড়িতে গেলে তাদের লোকজন গোলাগুলি শুরু করলে পুলিশ চলে আসে। পরে আমরা অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে চলে আসি। সকালে বাবার লাশ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও লোকজন জড়িত রয়েছে। আমরা হত্যার সঙ্গে জড়িত সবার বিচার দাবি করছি।