বাঙ্গালীর বার্তা: রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে ৭ বছর বয়সী এক শিশু কন্যাকে হত্যার পর বালুচাপা দিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তের বাড়ি ভাংচুর করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন উত্তেজিত জনতা। এ সময় বেফাঁস মন্তব্য করায় মিঠাপুকুর থানার ওসিকেও অবরুদ্ধ করা হয়।
রবিবার দুপুরের দিকে এ ঘটনায় ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। হত্যার শিকার শিশু আকলিমা আক্তার (৭) উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের আরিফুল দম্পতির একমাত্র সন্তান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুটি সকালে তার মাকে সাহায্য করতে নিজে গরুর ঘাস কাটে। ঘাসগুলো বাড়িতে রেখে ভাত খেয়ে খেলতে যায়। খেলতে যাওয়ার দু’ঘণ্টা পর সকাল আনুমানিক ১০টার সময় জনৈক এক মহিলা অভিযুক্ত কাঠমিস্ত্রী ফজলুর বাড়ির সামনে রাখা বালির ভেতর শিশুটির দু’টো পা দেখতে পান। তিনি গিয়ে শিশুটিকে টেনে বের করে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তার চিৎকারে গিয়ে দেখেন শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটির শরীরে এবং মাথায় গভীর ক্ষত। এক পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ। স্থানীয় জনতা অভিযুক্ত ফজলু মিয়াকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্ত ফজলুর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে গাছপালা কেটে ফেলেন। এ সময় আপত্তিকর মন্তব্য করায় মিঠাপুকুর থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিককে ধাওয়া করে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন জনসাধারণ। পরে পুলিশ সুপার, ইউএনও, সেনাবাহিনী, র্যাব ও সিআইডির সহযোগিতায় ওসি আবু বকর সিদ্দিককে উদ্ধার করা হয়।
শিশুটির বাবা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কাজ করছিলাম, এক লোক আসি কইলো দেখো তোমার বেটির কি হইছে। যায়া দেখ্যো মোর বেটিক মারি বালা দিয়া ঢাকি থুইছে। মুই কি করিম। মোর বেটিক যেংকা করি কষ্ট দিয়া মারছে উয়্যাকও (অভিযুক্তকে) একইভাবে কষ্ট দিয়া মারা নাগবে।’
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, ‘ফজলুল যেভাবে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। খুব দ্রুতই এই ঘটনার বিচার নিশ্চিত করে প্রশাসনকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘ধর্ষকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে আমি বাধা দিয়েছিলাম। এ কারণে এলাকাবাসী আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।’
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতাকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়ে শান্ত করা হয়। সিআইডি টিম শিশুটির স্যাম্পল সংগ্রহ করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযুক্তকে আটক করে থানায় আনা হয়।’
রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, ৯৯৯ কল পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ওই স্থানে গিয়ে দেখতে পায় ধর্ষককে আটক করে রাখা হয়েছে। জনগণের হাতে থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসার পর ধর্ষকের বাড়িতে উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর করলে ও আগুন দিলে জনগণকে থামাতে গিয়ে জনরোষের স্বীকার হন মিঠাপুকুর থানার ওসি। পরবর্তীতে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার পর অতিরিক্ত ফোর্স, ইউএনও ও সেনাবাহিনীসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিয়ে জনগণকে শান্ত করেন। এ ঘটনায় ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে থানা হাজতে রাখা হয়েছে। মৃত কিশোরীর মরদেহ সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।