1. bangalirbarta@gmail.com : বাঙ্গালীর বার্তা : বাঙ্গালীর বার্তা
  2. info@www.bangalirbarta.com : বাঙ্গালীর বার্তা :
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
এবার পাকিস্তান থেকে আনা ৩২ টন পাখির খাদ্যে ২৫ টনই নিষিদ্ধ পপি বীজ একীভূত পাঁচ ব্যাংক: শুরু হলো প্রক্রিয়া বসানো হলো প্রশাসক সাবেক ইউপি সদস্যকে আটকে রেখে ৭০ লাখ দাবি,পরেরদিন মিলল লাশ নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি এক নজরে দেখে নিন ২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা সংকটে পড়েছে পোশাক শিল্প, কার্যাদেশ যাচ্ছে অন্য দেশে মেট্রোরেলে ত্রুটিপূর্ণ বিয়ারিং প্যাড দ্রুত বদলানোর সিদ্ধান্ত দেশে পুলিশের ওপর একের পর এক হামলা, মাঠ পর্যায়ে কঠোর নির্দেশনা উত্তরায় সার্জেন্টকে হুমকি ‘৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি’ বরিশালে অপসো ফার্মার ৫০০ শ্রমিক ছাঁটাই, সড়কে বিক্ষোভ

কোটি টাকা দিয়েও যাওয়া হলো না ইতালি, হস্তান্তর হলো অন্য মাফিয়া চক্রের হাতে

মেহেদী হাসান সেলিম বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

বাঙ্গালীর বার্তা: দিনের পর দিন ছোট একটি ঘরে বন্দি রেখে অমানবিক নির্যাতন, পাশাপাশি নানা কৌশলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের টাকা আদায়ের চেষ্টা- এসবই ছিল মানবপাচারকারীদের পরিকল্পনার অংশ। একপর্যায়ে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয় আরেকটি মাফিয়া চক্রের হাতে। এসবের মধ্য থেকে বেঁচে ফিরবেন, সেটা ভাবেননি শরীয়তপুরের দুই যুবক। লিবিয়ার ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনো ভয়ে আঁতকে ওঠেন তারা।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের মনুয়া এলাকার দুলাল ছৈয়ালের ছেলে আলতাফ হোসেন ছৈয়াল (৩০) এবং আইজারা এলাকার আবদুল গনি বলির ছেলে আহসান উল্লাহ বলি (৩০) প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরলেও এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তারা বেঁচে ফিরেছেন।


আলতাফ হোসেনের বাবা দুলাল ছৈয়াল দালালের কথায় আস্থা রেখে ছেলেকে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠাতে রাজি হন। দালাল জানান, ইতালিতে মোটা বেতনের কাজ মিলবে। এ জন্য আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা, এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং জমিজমা বিক্রি করে দফায় দফায় টাকা দেন তিনি। মোট খরচ হয় ৬৪ লাখ টাকা। কথা ছিল দুবাই, মিসর হয়ে ছেলেকে লিবিয়ায় পৌঁছে দেয়া হবে, সেখান থেকে যাবেন ইতালি।

গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আলতাফ হোসেন দালালের নির্দেশে কাগজপত্র ঠিক করে ভারত হয়ে শ্রীলঙ্কা পৌঁছান। সেখানে ২৪ দিন থাকার পর মিশর হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর দালাল হারুন লস্করের লোকজন তাকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে গিয়ে একটি ছোট বাড়িতে ৩০–৩৫ জনের সঙ্গে এক কক্ষে রাখেন। সেসময় আলতাফের বাবা হারুন লস্করকে দেন আরও ১২ লাখ টাকা।

বন্দী অবস্থায় টর্চারের চিহ্ন

দুই দিন পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি ক্যাম্পে। এমন আরও কয়েকটি ক্যাম্পে এক মাস ২৬ দিন আটকে রাখা হয়। পরে ১৩ নভেম্বর লিবিয়ার ত্রিপোলি সাগরপাড় থেকে একটি কাঠের নৌকায় ১৬০ জনকে তুলে একটি পাতানো নাটকের মাধ্যমে লিবিয়ার পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে চক্রটি তাদের আবার পুলিশের কাছ থেকে উদ্ধার করে একটি গুদামে নিয়ে যায় এবং শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।

প্রতিদিন মারধর চলত। বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণের টাকা আনতে চাপ দেয়া হতো। এতে করে আরও ২৬ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্রটি। ২৯ ডিসেম্বর আবার ৬০ জনকে একটি নৌকায় তুলে আরেকটি নাটক সাজিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়া হয়। পাঁচ দিন পর তাদের আবার এক চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।

৩১ ডিসেম্বর রাতে ওই চক্রটি আবার ৬৫ জনকে নিয়ে একটি গেমে পাঠায়। দুই ঘণ্টা সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকায় পানি উঠে যায়। তখন চক্রটি তাদের উদ্ধার করে। এই সময়ের মধ্যে আবারও পরিবার থেকে ফোন করে আদায় করা হয় আরও ২৩ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে আলতাফ হোসেনের পরিবার খরচ করেছে ৬৪ লাখ টাকা। অথচ, ইতালিতে পৌঁছানোর পরিবর্তে ৮ মাস পর বাড়ি ফিরেছেন তিনি শরীরে ক্ষত ও মনে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে।

অন্যদিকে, একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন আহসান উল্লাহ বলি। তিনি জানান, লিবিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই তাদের সবার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়। একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হয়। পালানোর চেষ্টা করায় তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে নিয়মিত মারধর করা হতো। বৈদ্যুতিক শক, প্লাস দিয়ে নখ উপড়ে ফেলা, বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পেটানো, অনাহারে রাখা এসব ছিল নিয়মিত বিষয়।

বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গত ৭ মে মুমূর্ষু অবস্থায় দেশে ফিরেছেন আহসান উল্লাহ। তিনি বলেন, মানবপাচার চক্রের সদস্য অনেক। বাংলাদেশ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদেরও টার্গেট করে তারা। ভালো চাকরি ও ইউরোপ পাঠানোর প্রলোভনে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায়ই তাদের প্রধান কাজ। আমার পরিবারের কাছ থেকে তারা আদায় করেছে ৬৫ লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সবার প্রতি অনুরোধ করব, এই চক্রের পাল্লায় পড়ে আর কেউ যেন লিবিয়া না যান। আমি টাকা ফেরত ও এই ঘটনার বিচার চাই। তাই ভেদরগঞ্জ থানায় দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।

আহসান উল্লাহ বলির মা লুৎফা বেগম বলেন, ‘আমরা শেষ হয়ে গেছি। ইতালি নেয়ার কথা বলে আমার ছেলেকে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে তার জীবন শেষ করে দিয়েছে ওরা। আমাদের এখন লাখ লাখ টাকা দেনা। পাওনাদাররা বাড়িতে আসলে আমরা পালিয়ে থাকি। আমার পরিবারটা এলোমেলো হয়ে গেছে। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই।’

তবে দালাল হারুন লস্কর দাবি করেন, ‘ঢাকা ও ফরিদপুরের লোকজনের মাধ্যমে আমার ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়েছি। আহসান উল্লাহ ও আলতাফের পরিবারের কাছ থেকে আমি কোনো টাকা নেইনি। এ ব্যাপারে কোনো ডকুমেন্টস বা প্রমাণ নাই।’

এ ঘটনায় আহসান উল্লাহ বলি বাদী হয়ে ছয়গাঁও বাংলা বাজার এলাকার হারুন লস্কর, তার ছেলে পাপ্পু লস্কর ও ইমন লস্করের বিরুদ্ধে ভেদরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে মামলা রুজু করা হবে।’

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভেদরগঞ্জের দুই তরুণ দালালের মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশে লিবিয়া যায়। সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে মুক্তিপণেল মাধ্যমে দেশে ফিরে এসেছে এমন তথ্য পেয়েছি। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু চক্রকে শনাক্ত করেছি এবং তাদের আইনের আওতায় এনেছি।’

এদিকে জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে একই ইউনিয়নের আরও ১১ জন যুবক লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

সুত্র: সময় সংবাদ

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট