বাঙ্গালীর বার্তা: অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই সরকারের ব্যাংকঋণ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংকঋণ বেড়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ। এবার ব্যাংকঋণের পুরোটাই জোগান দিয়েছে বাাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস ১৫ দিনে (১ জুলাই থেকে ১৫ জুন) সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫৯০ কোটি টাকা বেশি। অন্যদিতে গত ১৫ মে পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংকঋণ ছিল ৫০ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানেই সরকারের নিট ব্যাংকঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
অর্থবছর শেষের দিকে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবং রাজস্ব আদায় প্রত্যাশিত না হওয়ায় ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক ঋণ ছাড়ে শ্লথগতি, সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর হার বেড়ে যাওয়া এবং উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড় বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে, যা তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংক খাতকে আরও চাপের মধ্যে ফেলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলেছে, গত ১৫ জুন শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৮০ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে সরকারের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নিচ্ছে না সরকার। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছে সরকার। গত ১৫ জুন শেষে ব্যাংকগুলো থেকে সরকার প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। তবে একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের প্রায় ২২ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণকে টাকা ছাপানো হিসেবে গণ্য করা হয়।
নতুন অর্থবছরে বাজেটেও সরকার বড় অঙ্কের ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এবার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এটি বাজেটে প্রক্ষেপিত মোট ঘাটতির প্রায় ৪৬ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। এই ঋণের পুরোটাই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে। ফলে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংক খাতে আরও চাপ সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সরকার ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিলেও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ভাটা পড়েছে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সুদহারের ক্রমাগত বৃদ্ধি, তারল্য সংকট ও ডলারের স্বাভাবিক জোগান নিশ্চিত না হওয়াকে দায়ী করেছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা।
সুত্রঃ বাঃ প্রঃ