বাঙ্গালীর বার্তা: আজ ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। এক বছর আগে, ২০২৪ সালের এই দিনে স্বৈরাচার, দুর্নীতি, গুম, দমন-পীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধ চূড়ান্ত রূপ নেয় জুলাই গণঅভ্যুত্থান এর মধ্য দিয়ে। পতন ঘটে দীর্ঘ ১৬ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের। আজ সেই গৌরবময় গণজাগরণের প্রথম বার্ষিকী। দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’।
সেইদিন অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং শীর্ষ নেতৃবৃন্দও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ক্ষমতা গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
জাতীয় ছুটি ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। আজ বন্ধ রয়েছে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা ও শিল্প কলকারখানা।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, দিবস উপলক্ষে দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মূল মঞ্চে সাউন্ড, লাইটিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে থাকছে বিশেষ ড্রোন শো এবং রাত ৮টায় পরিবেশিত হবে জনপ্রিয় ব্যান্ডদলগুলোর কনসার্ট। এছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বাণী
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, “আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি সেই সব শহীদকে, যারা দেশের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটাতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমরা তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহত, পঙ্গু ও দৃষ্টিশক্তিহীন হয়ে যাওয়া সব বীর জুলাই যোদ্ধাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।”
তিনি বলেন, ‘‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল— দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন, অপহরণ, ভোটাধিকার হরণসহ সব ধরনের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও আপামর জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এই বৈষম্যমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করাই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য।’’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেছেন, “টানা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিস্ফোরণ ছিল জুলাই গণ–অভ্যুত্থান। জুলাই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।’ “জুলাই আমাদের দিয়েছে নতুন আশার আলো। এটি ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে একটি নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছে। শহিদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে সম্ভাবনার দরজা খুলেছে, তা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে এ সকল লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জুলাই গণহত্যার বিচারের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জুলাই শহীদদের স্মৃতি রক্ষা ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন নিয়ে বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে রাজনৈতিক ও নির্বাচন ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় সকল সংস্কারে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সাথে আলোচনা চলমান আছে। একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধানের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থান–সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “আজ আমি স্মরণ করছি সেই সব সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, পেশাজীবীদের; যাঁরা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করতে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। আমি গণ–অভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমি গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি সকল জুলাই যোদ্ধাকে; যাঁরা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন, হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। জাতি তাঁদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।”