1. bangalirbarta@gmail.com : বাঙ্গালীর বার্তা : বাঙ্গালীর বার্তা
  2. info@www.bangalirbarta.com : বাঙ্গালীর বার্তা :
বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ন

অটোরিকশা বা ইজিবাইকে আসছে নীতিমালার লাগাম

শামীম আহসান বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

বাঙ্গালীর বার্তা: দীর্ঘদিন ধরে দেশের সড়কপথে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার বা ইজিবাইকগুলোর জন্য বড় এক নীতিগত পরিবর্তন আসছে। এই যানবাহনগুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে এবং চালকদের পেশাগত স্বীকৃতি দিতে সরকার ‘ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫’ নামে একটি খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এর ফলে, এতদিন যেসব চালক ও যানবাহন ‘অবৈধ’ ও ‘অবিন্যস্ত’ পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন, তারা এখন নাগরিক অধিকার ও মর্যাদার আওতায় আসতে যাচ্ছেন।

কী পরিবর্তন আসছে

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার চালাতে হলে বিআরটিএর নিবন্ধন ও বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হবে। এর ফলে এই পরিবহন মাধ্যমটি সরকারিভাবে স্বীকৃত হবে এবং চালকরাও পাবেন পেশাগত পরিচয় ও সামাজিক স্বীকৃতি। নীতিমালার আওতায় এক বছরের মধ্যে অননুমোদিত ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনগুলোকে নির্ধারিত নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে হবে, নতুবা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কেন এই নীতিমালা

সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ লাখ ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার চলাচল করছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ৮ থেকে ১০ লাখ রয়েছে। এত বিশাল একটি খাত থাকলেও এতদিন এর কোনো সুসংহত নীতিমালা ছিল না। ফলাফল হিসেবে তৈরি হয়েছে ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং মহাসড়কে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধীরগতির এই যানগুলো যখন বাস, ট্রাক বা দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে একই রাস্তায় চলে, তখনই সবচেয়ে বড় বিপত্তি ঘটে। তাই নীতিমালায় মহাসড়কে এ ধরনের যানবাহনের সরাসরি চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে, সার্ভিস লেনে এসব যান চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে।

কোথায় চলবে, কোথায় না

নীতিমালায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার চলতে পারবে শুধুমাত্র নির্ধারিত রুটে, সিটি করপোরেশন এলাকায়, ‘এ’ শ্রেণির পৌরসভা এবং জেলা বা উপজেলা সদরের নির্দিষ্ট অঞ্চলে। প্রতিটি এলাকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি নির্ধারণ করবে কতগুলো যান চলবে, যাতে সড়কে অতিরিক্ত চাপ তৈরি না হয়।

মালিকানা ও নিবন্ধনের সীমা

নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি মধ্যম গতির (২৫-৪০ কিমি/ঘণ্টা) অথবা পাঁচটি ধীরগতির (২০ কিমি/ঘণ্টা বা কম) থ্রি-হুইলারের মালিক হতে পারবেন। পরিবহন কোম্পানির ক্ষেত্রে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ ২৫টিতে সীমাবদ্ধ থাকবে। এ ধরনের যান রাস্তায় চালাতে হলে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে এবং চালকদের অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

চার্জিং স্টেশন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ইলেকট্রিক যান চার্জিংয়ের জন্য সরকার অনুমোদিত নির্দিষ্ট চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করতে হবে, যা ‘বৈদ্যুতিক যান চার্জিং নির্দেশিকা, ২০২১’ অনুসারে স্থাপন করা হবে। এর পাশাপাশি, প্রতিটি যানবাহনে ফিটনেস সনদ বাধ্যতামূলক থাকবে। ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ যেমন ব্যাটারি, মোটর, হেডলাইট, ব্রেক, স্পিডোমিটার প্রভৃতি বিটিআই অথবা মান নির্ধারক সংস্থার অনুমোদিত হতে হবে।

প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে বিআরটিএ ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। এসবের ফলে যানবাহনের মান বজায় থাকবে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা

চালকদের কেবল যানচালনার আইনি অধিকারই দেওয়া হচ্ছে না, বরং তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচিও চালু করতে যাচ্ছে সরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের এতদিন কেউ মানুষ বলেও বিবেচনা করতো না। কিন্তু এখন তারা আইনত রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স পাবেন যা তাদের সামাজিক মর্যাদা এনে দেবে।

তিনি বলেন, “চালকদের দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিখিল কুমার দাস জানিয়েছেন, এই নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা বহুদিন ধরেই অনুভব করা হচ্ছিল। এখন বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত নেওয়া হচ্ছে। মতামত গ্রহণ শেষে নীতিমালাটি গেজেটে প্রকাশ করে কার্যকর করা হবে।

চালকদের জীবনে কী পরিবর্তন আনবে

এই নীতিমালার মাধ্যমে শুধু যানবাহনের আনুষ্ঠানিকতা নয়, চালকদের জীবনেও এক বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতদিন এই পেশার মানুষদের ‘অবৈধ’ ও ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ বলা হতো, যার ফলে তারা ব্যাংক ঋণ, সামাজিক স্বীকৃতি, এমনকি অনেক সময় আইনগত সুরক্ষাও পেতেন না। এখন তাদের হাতে থাকবে বৈধ লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন কাগজ, যার মাধ্যমে তারা সরকারি নানা সুবিধার আওতায় আসতে পারবেন।

সচিবালয়ের সামনে কথা হয় চালক সিফাতুর রহমান বলেন, “আগে কেউ আমাদের কথা শুনতো না। পুলিশও আমাদের ভয় দেখাতো। এখন যদি কাগজপত্র থাকে, তাহলে আমাদেরও সম্মান থাকবে।”

ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা এবার শেষ হতে চলেছে। ‘ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫’ বাস্তবায়িত হলে দেশের সড়কে ফিরবে শৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা কমবে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো।দীর্ঘদিন উপেক্ষিত এই পেশাজীবী শ্রেণির মানুষরা পাবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা। এই উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এটি হবে দেশের পরিবহন খাতে এক যুগান্তকারী মাইলফলক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট