বাঙ্গালীর বার্তা: “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল…” এমনই ডিসেম্বরের কুয়াশা মোড়ানো এক ভোরে বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার নতুন সূর্য, উড্ডীন হয়েছিল মুক্ত ভূখণ্ডে লাল-সবুজ পতাকা। বাতাসে অনুরণন তুলেছিল অগণিত কণ্ঠের সুর ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি…।’ এই দিনটি তাই একদিকে যেমন এ দেশের মানুষের কাছে চিরগৌরব ও আনন্দের, তেমনি একই সঙ্গে স্বজন হারানোর বুকভাঙা আর্তনাদ আর বেদনার।
আজ মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর, এ দেশের বহুল কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের ৫৪ বছর পূর্তির দিন। মহান বিজয় দিবস। এই দেশের মানুষ চিরকাল এই দিনটির জন্য গর্ববোধ করবে। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতি এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাম সংযোজিত করেছিল। এর মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার স্বীকৃতি মেলে। প্রতি বছর দেশের মানুষ এই দিনটিকে আনন্দ উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে পালন করে থাকে।

পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে যখন এ দেশের ঘুমন্ত নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাংক-কামানের মতো ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র নিয়ে নৃশংস গণহত্যার পৈশাচিকতায় মেতে উঠেছিল, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল প্রতিরোধ সংগ্রাম, মুক্তির জন্যে যুদ্ধ।
দেশের বীর সন্তানেরা যুদ্ধের ময়দানে ছুটে গিয়েছিলেন শত্রুর মোকাবিলা করতে। জীবনের মায়া তাদের কাছে হয়েছিল তুচ্ছ। তাদের ছিল না যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, ছিল না কোনো উন্নত সমরাস্ত্র। আক্ষরিক অর্থেই যার কাছে যা ছিল, তা নিয়েই দেশের বীর সন্তানেরা শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মরণপণ লড়েছিলেন মুক্তির সংগ্রামে।

দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধ করেছিলেন দেশের সব ধর্ম, বর্ণ, ভাষার বীর সন্তানেরা। শেষ পর্যন্ত ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল সম্পদহানির ভেতর দিয়ে মুক্তির সংগ্রামে সফল হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ছিনিয়ে এনেছিলেন চূড়ান্ত বিজয়। জাতিকে মুক্ত করেছিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে।