1. bangalirbarta@gmail.com : বাঙ্গালীর বার্তা : বাঙ্গালীর বার্তা
  2. info@www.bangalirbarta.com : বাঙ্গালীর বার্তা :
বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ন

দুর্বল ৫ ব্যাংকের একীভূত করার উদ্যোগ প্রায় চূড়ান্ত

শিবু প্রসাদ দত্ত জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

বাঙ্গালীর বার্তা: ব্যাংকিং খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে দুর্বল পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগে চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ থেকে শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক শুনানি। তবে শেষ মুহূর্তে একীভূতকরণ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে দুটি ব্যাংক। একীভূত হওয়ার তালিকায় সব থাকবে, নাকি কোনো ব্যাংক নিজেকে রক্ষা করতে পারবে, সেই আলোচনা রয়েছে ব্যাংকপাড়ায়। ব্যাংকগুলোকে কেন একীভূত করা হবে না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যাও তলব করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে আমানতকারী ও কর্মীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আলাদা করে বাঁচানো সম্ভব নয়। তাই আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় একীভূতকরণই একমাত্র সমাধান। আবার এ সিদ্ধান্ত ঘিরে এসব ব্যাংকের কর্মীরা চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন। আমানত ফেরতের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত আমানতকারীরাও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একীভূত করার পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও পরিকল্পিতভাবে করতে হবে, যেন আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি কর্মীদের চাকরিতে বহাল থাকার নিশ্চয়তা থাকে। এর পাশাপাশি যাদের অনিয়ম ও লুটপাটে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, যেসব ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার সবগুলোই দুর্বল। অথচ বিশে^র কোথায়ও দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার নজির নেই। ফলে এগুলোকে একীভূত করলেও তাদের পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। তারপরও আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখতে চাইছে। এগুলো একীভূত করতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হবে, সেটা বাজেট বরাদ্দ বা টাকা ছাপিয়ে করতে হবে। এতে অর্থনীতির ওপরও চাপ পড়বে। আরেকটা বিষয়, যাদের অনিয়ম ও লুটপাটে ব্যাংকগুলোর এই অবস্থায় পৌঁছেছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। সূত্র জানায়, মূলধনের ঘাটতি, খেলাপি ঋণের চাপ, তারল্য সংকট ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এসব ব্যাংক টিকে থাকার সক্ষমতা হারিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চারটি বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল, আর এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে। গত এক বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের তারল্য সহায়তা দিয়েও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো যায়নি। তাই আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ফেরাতে এসব ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে প্রায় সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত ধাপে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত নিতে শুনানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিন অংশ নেবে এক্সিম ব্যাংক। এ ছাড়া ১ সেপ্টেম্বর এসআইবিএল, ২ সেপ্টেম্বর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ৩ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন ও ৪ সেপ্টেম্বর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক শুনানিতে অংশ নেবে। শুনানিতে চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য এবং এমডিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান বরাবর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাখ্যা তলব করে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ব্যাংকগুলোর মূলধন (ক্যাপিটাল), তারল্য সহায়তা, খেলাপি ঋণ, নগদ সংরক্ষণ অনুপাত (সিআরআর) এবং প্রভিশন ঘাটতির সর্বশেষ তথ্য নিয়ে শুনানিতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে কেন একীভূত করা হবে না, সে ব্যাখ্যাও লিখিতভাবে পেশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় প্রথম ধাপে ৫টি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন প্রক্রিয়া চূড়ান্তের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একীভূত না হতে তৎপর দুই ব্যাংক : একীভূতের তালিকায় থাকা এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক প্রক্রিয়ার শুরু থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে একীভূত প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক রেজাউল হকসহ ৯ জন শেয়ারধারী চিঠি দিয়েছেন। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডাররা অভিযোগ করেছেন, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটিকে দখল করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এখন প্রকৃত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে একীভূত প্রক্রিয়ায় জড়ানো হচ্ছে, যা তারা অন্যায্য ও বেআইনি বলে মনে করছেন। অন্যদিকে একীভূত না হওয়ায় কথা জানিয়ে বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছেন এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন।

যোগাযোগ করা হলে নজরুল ইসলাম স্বপন আমাদের সময়কে বলেন, এক্সিম ব্যাংক কেন একীভূত হতে চায় না সেটা আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি। আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি অন্যদের তুলনায় ভালো। এটা আমরা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বোঝানোর চেষ্টা করব। ব্যাংক একীভূতকরণ পদক্ষেপ ঠেকাতে নতুন করে তদবির অর্থনীতির সূচনা হচ্ছে বলে গত বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে মন্তব্য করেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূত করা রাজনৈতিকভাবে অনেক কঠিন বিষয়। এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের সময়েও একাধিক ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতার স্বার্থে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে কঠোর অবস্থানে আছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, প্রথম ধাপে যেই ব্যাংকগুলো একীভূত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাদের উন্নতি ঘটাতে এক বছরের বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। আসলে তারা নিজেরা কোনো মূলধনের জোগান দেয়নি, আবার বড় কোনো বিনিয়োগও আনতে পারেনি। এখন একীভূত ছাড়া তাদের আলাদা করে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কারণ কোনো ব্যাংকই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন মূলধন জোগান ও বিনিয়োগ আনার মতো সক্ষমতায় নেই। এই সক্ষমতা থাকলে এতদিনে সেটা করে দেখাত পারত।

আর্থিক পরিস্থিতি : আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো ও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে গত এক বছরে এই ৫ ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার হিসেবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা নিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সাত হাজার ৫০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ছয় হাজার ৬৭৫ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী দুই হাজার ২৯৫ কোটি ও ইউনিয়ন ব্যাংক দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা নিয়েছে। এরপরও ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী পাঁচ ব্যাংকের আমানত ধারাবাহিকভাবে কমে গত মে পর্যন্ত এক লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকায় নেমেছে। অন্যদিকে পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। মোট ঋণের যা প্রায় ৭৭ শতাংশ। বিপুল অঙ্কের এ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৭৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। শতাংশ বিবেচনায় সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৬ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ খেলাপির খাতায় উঠেছে।

দুশ্চিন্তায় আমানতকারীরা : একীভূত করার সিদ্ধান্ত জানাজানির পর থেকেই আমানত তোলার চাপে রয়েছে ব্যাংকগুলো। এতে ব্যাাংকগুলোর তারল্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে চাহিদানুযায়ী টাকা তুলতে পারছেন না গ্রাহকরা। একীভূত হওয়ার পর আমানতের টাকা তুলতে পারবেন কিনা সেই শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকেই। ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানতকারী গোলাম ফারুখ আমাদের সময়কে বলেন, ব্যাংকটিতে তার জমানো ৭ লাখ টাকার মতো আটকে আছে। দীর্ঘদিন চেষ্টা করে ১ লাখ টাকার কিছু বেশি তুলতে পেরেছেন। ব্যাংক একীভূত হলে তার এই আমানতের কী হবে- এই প্রশ্ন রাখেন তিনি। দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণ চলমান প্রক্রিয়া। তবে এতে আমানতকারীদের চিন্তার কোনো কারণ নেই; সরকার আমানকারীদের সব দায়িত্ব নেবে।

চাকরি হারানোর ভয়ে কর্মীরা : একীভূত হলে নতুন ব্যাংকের অনেক শাখা একই এলাকায় পড়ে যাবে। এতে কর্মী ছাঁটাইয়ের শঙ্কা তৈরি হবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ছাঁটাই এড়াতে গ্রামীণ এলাকায় নতুন শাখা খোলা হবে এবং স্থানীয় আমানত স্থানীয় এলাকাতেই বিনিয়োগ করা হবে।

প্রক্রিয়া সম্পন্নে লাগবে বিপুল অর্থ : বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এসব ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়ায় প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার কোটি টাকা মূলধন বিনিয়োগ হিসেবে সরকারের কাছে চেয়ে গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সব ব্যাংকের চাঁদায় গড়ে ওঠা আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে ঋণ হিসেবে থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে। এ জন্য আমানত বিমা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট