1. bangalirbarta@gmail.com : বাঙ্গালীর বার্তা : বাঙ্গালীর বার্তা
  2. info@www.bangalirbarta.com : বাঙ্গালীর বার্তা :
বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে অস্থিরতার নতুন আভাস

বাঙ্গালীর বার্তা অনলাইন ডেস্কঃ
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

বাঙ্গালীর বার্তা: তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের মুখে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের সরকারের পতন ঘটেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিন্নতা সত্ত্বেও এসব দেশের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণ প্রজন্ম। জেন-জি নামে পরিচিত এই প্রজন্ম প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিশাল ফারাকে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, এই ক্ষোভ প্রশমনে রাজনৈতিক ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। অভ্যুত্থানের এই ধারাবাহিকতা আঞ্চলিক রাজনীতি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

দক্ষিণ এশিয়ায় জেন-জি অভ্যুত্থানে সরকার পতনের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০২২ সালে শ্রীলংকায়। জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দেশটির সরকারের পতন ঘটায়। এর দুই বছরের মাথায় বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সরকারের পতন হয়। সবশেষ চলতি বছর সরকারের পতন ঘটিয়েছে নেপালের তরুণদের বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছোট একটি ইস্যু বড় বিস্ফোরণের জন্ম দিয়েছে। এই বিস্ফোরণ শুধু সরকারের পতনে থামেনি; বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার শাসনব্যবস্থার জন্য এক কঠিন বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, এই অঞ্চলে অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি হলো প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিশাল ফারাক। তরুণরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব দেখতে পাচ্ছে- রাজনীতিকদের দুর্নীতি, বিলাসী জীবনযাত্রা আর নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এই বৈপরীত্য তাদের ক্ষুব্ধ করছে।

হিমালয়ের কোলে শান্ত নেপাল ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু করে। এর পর থেকেই দেশটির রাজনীতি বারবার টালমাটাল হয়েছে। গত ১৭ বছরে ১৩ বার ক্ষমতার পালা বদল হয়েছে দেশটিতে। এবার ২৬টি সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে মাত্র দুই দিনের বিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। তরুণদের ক্ষোভের আগুনে রাজধানী কাঠমান্ডুতে সংসদ ভবন থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের বাসভবন পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়। প্রাণ হারান তরুণ বিক্ষোভকারীরা। এই দৃশ্য দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন নয়। শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশে

একইভাবে গণ-অভ্যুত্থান সরকারের পতন ডেকে এনেছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনটি ঘটনার অভিন্ন চরিত্র হলো তরুণ সমাজের নেতৃত্ব। তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত সংগঠিত হয়েছে। রাষ্ট্র যখন দমন-পীড়ন করেছে, তখনই আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হলে সরকারের নৈতিক বৈধতা মুহূর্তে ভেঙে পড়ে।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘জনগণের আস্থা ছাড়া কোনো সরকার টিকে থাকতে পারে না। দমননীতি হয়তো আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের পতন ঘটায়।’ ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল কারণ ছিল দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসন, একতরফা নির্বাচন, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং ভয়ংকর দুর্নীতি। শিক্ষাব্যবস্থার সংকট, বেকারত্ব, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় দমননীতি জন-অসন্তোষকে তীব্র করে তোলে। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং সাধারণ মানুষ এতে যোগ দেয়, যা শেষ পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।

নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা কেবল দেশটির অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ নেই। ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থানকারী পাহাড়ি রাষ্ট্রটি ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের একাধিক স্থলবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ পণ্য আদান-প্রদান করে ভারত। প্রশাসনিক জটিলতা ও অনিশ্চয়তার কারণে এই সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ভারতের উচ্চাভিলাষী জ্বালানি পরিকল্পনাও এখন অনিশ্চিত। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি প্রকল্প রাজনৈতিক অস্থিরতায় থমকে গেছে। এতে শুধু ভারত নয়, বরং আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতাও সংকটে পড়তে পারে।

অন্যদিকে, চীন ২০১৭ সালে নেপালকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যুক্ত করেছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক ও রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা থাকলেও নেপালের অস্থিতিশীলতা চীনের জন্যও অন্তরায় তৈরি করছে। বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের ভেতরে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও চোরাচালানচক্রকে সক্রিয় করে তুলতে পারে। সীমান্তে মানবপাচার ও মাদকপাচার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এই ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, নেতৃত্বের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই সংকট তৈরি করেছে। বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলংকার অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে যে বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে অবহেলা করে আর ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলংকার অভ্যুত্থানগুলো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক ধরনের সতর্ক সংকেত হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো একচেটিয়া প্রবীণ নেতৃত্বে বন্দি হয়ে পড়েছে। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের চক্র ভাঙতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। নতুন প্রজন্ম রাজনীতির বাইরে থেকে যাচ্ছে, অথচ তারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। বৈষম্যের এ বাস্তবতা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এবং সেখান থেকেই আন্দোলনের জ্বালানি তৈরি হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের আন্দোলনের প্রভাব দীর্ঘসময় ধরে চলবে। একই ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া আন্দোলনের প্রভাব এখনও রয়ে গেছে শ্রীলংকা, বাংলাদেশে। রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির সতর্ক করে বলেন, ‘যদি কর্মসংস্থান তৈরি না হয়, দুর্নীতি জিরোতে না আসে এবং শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা না বাড়ে, তবে এই অভ্যুত্থানের ধারা অন্য দেশেও দেখা দিতে পারে। গণ-অভ্যুত্থান সরকারের পতন ঘটালেও পরবর্তী দিকনির্দেশনা অনিশ্চিত থাকায় নতুন সংকট জন্ম নেয়।’

সুত্র: আমাদের সময়

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট