1. bangalirbarta@gmail.com : বাঙ্গালীর বার্তা : বাঙ্গালীর বার্তা
  2. info@www.bangalirbarta.com : বাঙ্গালীর বার্তা :
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ফ্লোটিলা থেকে শহিদুল আলম যে বার্তা দিলেন

মাহফুজুর রহমান বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

বাঙ্গালীর বার্তা: ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গাজার অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে রওনা হওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ‌‌কনসিয়েন্স নামে নৌকার আরোহী বিশ্বনন্দিত বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম তাদের চ্যালেঞ্জিং যাত্রার সম্পর্কে বার্তা দিয়েছেন।

এই নৌবহরে হানা দিয়ে ১৩টি নৌকার দুই শতাধিক মানবাধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী। তবে ফ্লোটিলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, অন্য নৌকাগুলো মিশনে অবিচল রয়েছে, দৃঢ়তার সঙ্গে তারা গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

কনসিয়েন্স নৌকায় যাত্রার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার সকালে সবশেষ ফেসবুকে পোস্ট লিখেছেন শহিদুল আলম।

নৌকার ভেতরের একটি ছবি দিয়ে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন শহিদুল আলম, “নৌকার ভেতরে ঘুমানোর স্থান এই জায়গাটি। জাহাজে ওঠার সর্বশেষ ব্যক্তি হিসেবে আমার এখানে কোনো জায়গা ছিল না। গত রাতটা আমি খোলা ডেকেই ঘুমিয়েছিলাম কিন্তু বাইরে ঝড় থাকার কারণে সেই সুযোগও আর ছিল না। বের হওয়ার গেটের পাশে একটি ছোট্ট জায়গা খুঁজে পেলাম। সেখানে শব্দ ছিল এবং আলো জ্বলজ্বল করছিল, কিন্তু পূর্বে আটক ও কারাবাসে থাকার সময় আমার সেইসব অবস্থার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল; ফলে আমি গভীর ঘুমে ডুবে গিয়েছিলাম।”

এরপর তিনি লিখেছেন, “বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শুভকামনা ও প্রার্থনার বার্তা আসছে। আমি দুঃখিত সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে জবাব দিতে পারছি না, তবে আমি আপনার অভিনন্দন ও প্রার্থনা আমার সাথীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এটা সত্যিই অনেক বড় প্রভাব ফেলে।”

সংবাদমাধ্যমের অনেকে খবরের জন্য যোগাযোগ করছেন জানিয়ে শহিদুল আলম লিখেছেন, “মিডিয়ার বন্ধুদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যারা আপডেট ও কনটেন্ট চেয়েছেন। অনুরোধ অনেক বেশি, তাই ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেককেই জবাব দিতে পারছি না। কনটেন্টের জন্য দয়া করে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে দৃকে (দৃক গ্যালারি) যোগাযোগ করুন। সংহতি ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।”

তিনি লিখেছেন, সুমুদ ফ্লোটিলার কিছু নৌকা আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি জলদস্যুরা যেভাবে কব্জা করেছে, সেই আলোচনা অবশ্যই বারবার ফিরে আসছে। আমাদের গাজায় পৌঁছাতে এখনো বেশ পথ বাকি, তাই আমরা ভাবছি আমাদের সঙ্গে কী হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের বলা হয়েছিল, আজ (২ অক্টোবর) সাগরের ঢেউ প্রায় দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। অবশ্য ঝড় শেষ হয়ে গেছে এবং বজ্রপাত নেই। ক্যাপ্টেন গতি বাড়িয়েছেন যেন ঝড়ের আগে থাকতে পারি; যা কার্যকর হয়েছে বলে মনে হয়। বমির ব্যাগ দেওয়া হয়েছিল আমাদের যদিও সেগুলো কাজে লাগেনি।”

শেষ বাক্যে শহিদুল আলম লিখেছেন, ‍“আমরা অবরোধ ভাঙব। আপনার উপস্থিতি এবং সংহতি আপনাদের অনুমানের চেয়েও বেশি মূল্যবান। ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে।”

এর আগে ফেসবুকে আরেক পোস্টে শহিদুল আলম লেখেন, “আজ (বুধবার) রাতে সমুদ্র ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল, আর আমরা বজ্রপাত ও ঝড়ের আগে আগে যেতে লড়াই করেছি।”

ওই পোস্টে তিনি আরো লেখেন, “আমাদের দ্রুত চলার আরেকটি কারণ ছিল, খবর এসেছে যে ইসরায়েলি জলদস্যুরা সামনের জাহাজ ‘আলমা’র দিকে এগিয়ে আসছে। এটাই তাদের কৌশল। আমাদেরটা সবচেয়ে বড নৌকা, আর আলমাকে আক্রমণ করে তারা আমাদের ভয় দেখাতে চাইছে। কিন্তু আমরা ভীত হব না।”

“আমরা এই ঝড়ো রাতে বের হয়েছি একটি বার্তা দেওয়ার জন্য এবং গান গাওয়ার মাধ্যমে আমাদের সংহতি প্রকাশ করার জন্য। আমরা জানি আপনিও আমাদের পাশে আছেন। উঠে দাঁড়ান। প্রতিরোধ করুন। ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে আমরা হাল ছাড়তে পারি না,” বলেন শহিদুল আলম।

নৌকা বহরের একেবারে শেষটাতে রয়েছেন শহিদুল আলম। তার সর্বশেষ পোস্ট থেকে পরিষ্কার হলো, তিনি গ্রেপ্তার হননি। তিনি ও তার সহমর্মীরা গাজা অভিমুখী নৌকায় রয়েছেন।

সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া সম্পর্কে জানাতে ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শুক্রাবাদে দৃকপাঠ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম বলেছিলেন, “বাংলাদেশের সব মানুষের ভালোবাসা নিয়ে অংশ নিচ্ছি। এই সংগ্রামে যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে মানবজাতি পরাজিত হবে। জানামতে এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে কেউ এ ধরনের ফ্লোটিলাতে অংশ নেবে।”

শহিদুল আলম সেদিন বলেছিলেন, “সারা পৃথিবীর জনগণ ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়ায়, সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ফিলিস্তিনে এত বড় একটা গণহত্যায় কিছুই করতে পারছে না। বিভিন্ন দেশের জনগণ নিজেদের মতো করে এক ধরনের রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ) রাখছে, যেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার অংশ হিসেবে এই ফ্লোটিলা হচ্ছে। এই যাত্রায় অনেক বিপদ থাকতে পারে। কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা আদৌ পৌঁছাতে পারব কি না, জানি না। এসব মেনে নিয়েই সবাই অংশ নিচ্ছে।”

পূর্বাপর
ভূমধ্যসাগরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় সুমুদ ফ্লোটিলাকে ধাওয়া দিয়ে কয়েকটি নৌকায় উঠে গিয়ে দুই শতাধিক অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করার পরও গাজা অভিমুখী যাত্রায় অবিচল রয়েছে বাকি নৌকাগুলো। সেখান থেকে শহিদুল আলমের মতো অন্যদের কাছ থেকেও বার্তা আসছে, ফিলিস্তিন স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাল উড়বেই।

ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ভোরে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, গাজার পথে মিশন ‘দৃঢ়ভাবে অগ্রসরমান’।

তিনি লিখেছেন, “দখলদার ইসরায়েলি নৌবাহিনীর অবিরাম আগ্রাসন সত্ত্বেও ফ্লোটিলার ৩০টি নৌকা এখনো গাজার পথে অবিচলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

সুমুদ ফ্লোটিলা ট্রাকারে দেখা যাচ্ছে, অন্তত একটি নৌকা গাজার জলসীমায় প্রবেশ করেছে, যার পেছনে আসছে আরো নৌকা।

অবশ্য ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, ফ্লোটিকার কাউকে গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আর অধিকারকর্মীরা বলছেন, তারা গাজায় প্রবেশের জন্য প্রাণ বাজি রেখেছেন।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকেই গাজা ফ্লোটিলা বলা হচ্ছে। আলজাজিরা লিখেছে, গাজা ফ্লোটিলা অর্থাৎ গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া নৌকার বহরে রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঁচ শতাধিক অধিকারকর্মী, রাজনীতিক, কূটনীতিক ও জলবায়ুকর্মী।

এই অধিকারকর্মীদের মধ্যে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু আন্দোলনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত গ্রেটা টুনবার্গ রয়েছেন, যাকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি হানাদারা বাহিনী। তাকে গ্রেপ্তারের মুহূর্তের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান।

এই ফুটেজ ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ছাড়া হয়; সেখান থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংগ্রহ করেছে। ভিডিওতে গ্রেটার সঙ্গে তার সহযোগীদের দেখা গেছে।

ইসরায়েলের গণহত্যা অভিযানে গাজার অন্তত ৬৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, গুরুতর আহত হয়ে জীবনের সঙ্গে লড়ছেন প্রায় দেড় লাখ। বহু শিশু অনাহার-অর্ধাহারে মায়ের কোলে মারা যাচ্ছে, কঙ্কালসার সন্তান প্রসব করছেন গাজার মায়েরা। আর সব বয়সি মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে ধুকছে।

শুরুর দিকে বিশ্ব সম্প্রদায় নিশ্চুপ থাকলেও কয়েক মাস হলো ইউরোপ, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিক ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সহ অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থনে এখনো গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শহিদুল আলমের মতো বিশ্বের ৪৬টি দেশের অধিকারকর্মীরা যখন গাজা ফ্লোটিয়া নিয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন এবং অধিকাংশ দেশ যখন এই ফ্লোটিলার পক্ষে রয়েছে, তখনো গাজায় নরহত্যা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল।

আলজাজিরার সবশেষ খবরে বলা হয়েছে, বুধবারও (১ অক্টোবর) গাজায় ৯৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

অবশ্য গাজা ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হানার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা ও ইতালিতে বিশাল র‌্যালি হয়েছে। মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলাসহ অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ইসরায়েলের নিন্দা করে অধিকারকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কলম্বিয়া থেকে ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং কালবিলম্ব না করে তাদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলম্বিয়া সরকার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট