বাঙ্গালীর বার্তা: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া দল একাধিক অংশ হয়ে গেলেও এবার পাঁচ অংশের নেতারা এসেছেন একই মঞ্চে। এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদ’ আয়োজিত স্মরণসভায় এমন দৃশ্য দেখা যায়। যেখানে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ জাপা ছেড়ে যাওয়া একাধিক নেতা অংশ নেন। এসময় সবাই জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার তাগিদ দেন।
মূলত জাতীয় পার্টির সদ্য অব্যাহতি দেওয়া সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যার এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ‘পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদ’ ব্যানারে এই স্মরন সভার আয়োজন করা হয়। যদিও এই নেতারা জিএম কাদেরের দেওয়া অব্যাহতি মানছেন না। তারা এখনো দলে আছেন বলে দাবি করেছেন।
সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠঅনে এরশাদের জাতীয় পার্টির পাশাপাশি, জাতীয় পার্টি (রওশর এরশাদ), জাতীয় পার্টি—জেপি, জাতীয় পাটির (কাজী জাফর) ও জাতীয় পার্টি (মতিন) এর নেতারা একমঞ্চে বসেন।
জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি—জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ) নির্বাহী সভাপতি কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ—জেপিবির প্রধান উপদেষ্টা সাবেক এমপি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদারুল আলম চৌধুরী, জাপার সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, জাপার ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, খুলনা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমাকে বলা হয় আমি জাতীয় পার্টি ভেঙ্গেছি। কিন্তু আমি দল ভাঙ্গিনি। দল আমাকে বের করে দিয়েছে। আমার নেতৃত্বে আন্দোলন করে আমি এরশাদকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলাম। আমি সব সময় বলে এসেছি ঐক্যের কথা। আজ এরশাদ সাহেবের স্মরন সভায় এসে বৃহত্তর ঐক্যের যে কথা শুনছি, তা যদি বাস্তবে কার্যকর করা যায়, তাহলে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হবে।
আনোয়ার হোসে মঞ্জু বলেন, এরশাদকে স্বৈরাচার বলা হতো। কিন্তু ৫ আগস্টৈর পর আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার বলা হচ্ছে। সময়ের পরির্বতনে আরো অনেক দলকে স্বৈরাচার বলা হবে। সব সরকারই সংস্কার করতে চায়, একইসঙ্গে সব সরকার ভালো কাজ করতে চায়। কিন্তু নানা বাধার কারণে সবকিছু করা যায় না। এরশাদ সাহেব যে সংস্কার করে গেছেন, তা কোনো সরকার করতে পারেনি।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ছাত্ররা জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা যে জন্য জীবন দিয়েছেন, সে স্বপ্ন এখানো পূরন হয়নি। দেশে আজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি। সাধারণ মানুষ চরমভাবে নিরাপত্তহীনতা মধ্যে রয়েছে। দেশের এই অস্তির সময়ে দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। শেষ জীবনে আমাদের উচিত দেশকে কিছু দেওয়া। তাই আমরা যারা আজ এখানে এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছি, আমাদের উচিত হবে সবাই মিলে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের বৃহত্তর কল্যানে কাজ করা। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তাহলে জাতীয় পার্টি হবে জাতীয় রাজনীতির বিকল্প শক্তি।
ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমরা অবশ্যই নির্বাচন চায়। তবে তার আগে দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ চায়। আজ সরকার যে সংস্কার কায্যক্রম শুরু করেছে, সে সংস্কার এরশাদ সাহেব ৩৫ বছর আগে শুরু করে গেছেন।
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আসুন আমরা শেষ জীবনে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করি। দেশে আবারও পরিবর্তন আসবে। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে যাব।
জাপার অব্যাহতি পাওয়া মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে পারিবারিক রাজনীতির কবর রচনা হয়েছে। এখন স্বামী-স্ত্রীর কথায় রাজনৈতিক দল পারিচালিত হবে না। এখন রাজনীতিক দল পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে-যৌথ নেতৃত্বে মাধ্যমে।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি প্রয়োজনে মহাসচিব থাকব না। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে অনুরোধ করব, তারা যেন আমাদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় পার্টিক ঐক্যবদ্ধ করে দেশের মানুষের কল্যানে কাজে লাগায়।
জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উদ্দেশ্যে শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, সব বিভেদের অবসান ঘটিয়ে দলকে যদি ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন, তবেই দল আগামী দিনে ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করতে পারে। আপনি বিভেদ ভুলে যান। ঐক্যের প্রক্রিয়ায় সামিল হন।
শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে কি না, তা আমরা জানি না৷ জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পরে বিএনপির জনপ্রিয়তাও নিচের দিকে। আজকে দেশের মানুষ বিএনপি, আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দেখতে চায়। এ সময় তিনি জাতীয় পার্টির
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যদি এক হন, যদি অল্টারনেটিভ শক্তি হিসেবে দলকে দাঁড় করাতে পারেন, তবে আমরা আপনাদের সাথে আছি।
একই কথা বলেন দলটির নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন। তিনি বলেন, জনতা পার্টি বাংলাদেশ যদি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনও পেয়ে যায় তবেও আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকে আমরা সবাই মিলে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলব।