1. bangalirbarta@gmail.com : বাঙ্গালীর বার্তা : বাঙ্গালীর বার্তা
  2. info@www.bangalirbarta.com : বাঙ্গালীর বার্তা :
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ০২:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাকে গ্রেপ্তারের ভিডিও পোস্ট করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৩ জনের লাশ উত্তোলনের নির্দেশ আদালতের ত্রানের জন্য আসা ৯৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী রাজনীতি বিভক্তির পথে হাঁটছে কেয়ামত পর্যন্ত জামায়াত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারবে না: গয়েশ্বর চন্দ্র চট্টগ্রামে নিউ মার্কেট মোড়ে বাসে অগ্নি সংযোগ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিভেদ তৈরি করে রাখা হয়েছে: নাহিদ ইসলাম ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠিত হবে আশা মির্জা ফখরুলের এনসিপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার হুঁশিয়ারি বান্দরবান ছাত্র সমাজের চট্টগ্রামে এনসিপির সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা

রাজনীতি বিভক্তির পথে হাঁটছে

শিবু প্রসাদ দত্ত জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

বাঙ্গালীর বার্তা: দেশের রাজনীতি স্পষ্টই বিভক্তির পথে হাঁটছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, বিশেষ করে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের ইস্যুতে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর মধ্যে দূরত্বে এখন আর কোনো রাখঢাক নেই।

প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ করে কুরুচিপূর্ণ এবং অশ্লীল মন্তব্য এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সভামঞ্চ ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই বিভাজন বাড়ছে।

রাজনৈতিক নতুন মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে

গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এন‌সি‌পি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ ডান ও ধর্মভিত্তিত দল‌গু‌লো‌কে আমন্ত্রণ জা‌নায় জামায়া‌তে ইসলামী। তবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং বামপন্থী দলগুলোকে। বেশ কয়েকটি দল আমন্ত্রণ পেলেও সমাবেশে যোগ দেয়নি।

গত ২৮ জুন একই স্থানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশেও বিএনপি ও তাদের সমামনা দল এবং বাম দলগুলোর উপস্থিতি ছিল না। ছিল জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিশের শীর্ষ সদস্যরা।

সে সময় ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পিআর পদ্ধতির পক্ষে না থাকায় বিএনপিকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ওই সমাবেশে সংসদ নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে আয়োজন করার জোর দাবি জানানো হয়।
সার্বিক এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবাই একমত হবে—এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এই সংস্কারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট করে তুলেছে। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে—এই বিভাজন আরো বাড়বে। রাজনীতিতে ভিন্নমত স্বাভাবিক।

কিন্তু কোনো পক্ষের পূরণযোগ্য নয়—এমন দাবি পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের কারো ধারণা, রাজনীতিতে নবাগত একটি পক্ষ প্রত্যাশিত ম্যাচুউরিটি দেখাতে পারছে না। এতে সমস্যা বাড়ছে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় দেশে কেউ উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কি না সে প্রশ্নও উঠেছে। কারো মতে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের নিরপেক্ষ রাখার চেষ্টা করছে না। এ কারণেও দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি বাড়ছে।
গত শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রশ্ন তোলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় দেশে কেউ উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কি না।

গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী হয়েছে। এখন দক্ষিণপন্থীদের প্রভাব বেড়েছে। তাদের একটা উত্থান হয়েছে এখন। ছাত্রদের নেতৃত্বে যে পার্টি হয়েছে, সে পার্টির বক্তব্যে শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষ নিয়ে কোনো কথা নেই। তারা ভাবছে ধর্মকে ব্যবহার করবে। সে জন্য তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে বিএনপিকে সবচেয়ে প্রগতিশীল মনে হচ্ছে। তারাই কথাবার্তা বলছে।’

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, একটি ভ্রান্ত ধারণা থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এই সংস্কারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট করে তুলেছে। সংস্কার প্রস্তাবে সব দল একমত হবে—এই ধারণাটিই ভুল। তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ আছে। কিছু কিছু প্রস্তাবে দলগুলোর মতৈক্য হতে পারে এবং হয়েছেও। বড় ইস্যু, ছোট ইস্যু—এসবে মতানৈক্য থাকবেই। সবাই যদি সব ব্যাপারে একমত হতো তাহলে তো আর এত রাজনৈতিক দল হতো না। আমার দৃষ্টিতে ঐকমত্য শুরুর যে ধারণা, সবাই একমত হবে, এটাই ভ্রান্ত ছিল। এ ছাড়া সংস্কার বিষয়ে এত নতুন ইস্যু আনা হয়েছে—দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, পিআর পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট মেয়াদ, এক ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা—এসব নিয়ে তো গত ৫০ বছরে আলোচনা হয়নি। এসব নিয়ে আলোচনা শুরু করা মাত্রই যে সবাই একমত হবে—এটা ভ্রান্ত ধারণা। অনেক নতুন ইস্যু, নতুন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। এতে ভিন্নমত হবে, এটাই স্বাভাবিক। শেষ পর্যন্ত অনেক সংস্কার প্রস্তাবে বিভিন্ন দল বিভিন্ন ধরনের মত প্রকাশ করবে। আমি বলব, ঐকমত্য হবে—এটা ধরে নিয়ে না এগোনোর থেকে যেগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোতেই সন্তুষ্ট থাকা দরকার। যেগুলো সম্পর্কে ঐকমত্য হবে না সেগুলো ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। জামায়াতের অনেক দাবি বামপন্থীরা মেনে নেবে না, আবার বামপন্থীদের প্রস্তাব ডানপন্থীরা মেনে নেবে না। মধ্যপন্থী অবস্থান থেকে কোনো দল নিজেদের স্বতন্ত্র মত প্রকাশ করতে পারে। রাজনীতিতে এটাই স্বাভাবিক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুকে কে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তা নিয়ে বিভক্তি থাকতে পারে। জামায়াতে ইসলামী এ বিষয়ে কম গুরুত্ব দিতে পারে। তার সঙ্গে অন্য কিছু দলও যদি মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব খাটো করে দেখে, তাহলে তারা জামায়াতের বি-টিম হিসেবেই বিবেচিত হবে। কেউ যদি জামায়াতের বি-টিম হতে চায় সে অধিকার ও স্বাধীনতা তাদের আছে। এটা আমার আপনার আপত্তি বা সমর্থনের বিষয় না। জনগণ তাদের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদের মতে, নির্বাচন নিয়ে মেরুকরণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরো স্পষ্ট হবে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে যেসব দল আমন্ত্রিত ছিল তাদের সম্পর্কে অনেকের ধারণা, এসব দল হয়তো নির্বাচনী জোট গঠন করতে পারে। বিএনপির সঙ্গে এসব দল হয়তো থাকবে না। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই মনে হয়েছে, জামায়াত এবার নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে চাচ্ছে। নির্বাচনী জোট যদি হয় তাহলে সে জোটের লিডিং পার্টনার হবে জামায়াত। বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং বাম দলগুলোকে সমাবেশে আমন্ত্রণ না জানিয়ে জামায়াত হয়তো সম্ভাব্য মেরুকরণের বার্তা দিয়েছে। সংস্কার ইস্যুতেও এই দলগুলো একমত।’

অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ আরো বলেন, ‘রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবে। কিন্তু রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে এনসিপি নেতাদের এখনো ম্যাচিউর বলে মনে হচ্ছে না। সর্বশেষ বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে সে রকমই মনে হয়েছে। আবার সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে বক্তব্যের প্রতিবাদে এনসিপির পথসভামঞ্চ ভাঙচূর করাও ঠিক হয়নি। এদিকে সমাবেশে আমন্ত্রণ না পেলেও জামায়াতের আমির অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে দেখতে গেছেন বিএনপির নেতারা। এই সৌহার্দ্য স্বস্তির।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন একটি নিরপেক্ষ সরকার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এনসিপি, জামায়াতকে নানাভাবে এ সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে অনেকে মনে করেন। এর ফলে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এ সরকার নিজেদের নিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছে না, ফলে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে বর্তমানে যে রকম মব কালচার দেখা যাচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেভাবে চোখে পড়ছে তাতে নির্বাচনী সংঘাত ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা এ সরকারের আছে কি না সে প্রশ্ন রয়েছে। নিত্যনতুন এক একটা ইস্যু, সমস্যা সামনে আসছে। গোপালগঞ্জের ইস্যু, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের ইস্যু এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সে ধারাগুলো সামনে আসছে। ফলে নতুন নতুন বিতর্কিত ইস্যু রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি করছে। তা ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতি ঘটতে থাকলে সরকার যেকোনো সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণার সুযোগ নিতে পারে। জরুরি অবস্থা জারি থাকলে তো আর নির্বাচন হবে না। এ ছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি এ সরকারের সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর একটা সখ্য রয়েছে। আবার যেহেতু বিএনপি পিআর পদ্ধতির পক্ষে নয়, সেহেতু পিআর পদ্ধতির দাবি শক্তিশালী করে নির্বাচন পেছানোর পরিকল্পনা কাজ করছে কি না সন্দেহের অবকাশ থাকে। সরকারের ভেতর সমন্ব্বয়হীনতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সরকারের প্রতি আস্থার অবনতি—সময়মতো নির্বাচন অনুষ্ঠানে আশঙ্কার কারণ।’

অধ্যাপক মহিউদ্দিন বলেন, ‘ইসলামী দলগুলো তাদের ভোটব্যাংক বিবেচনা করে পিআর পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি করছে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তারা আসন অনেক কম পাবে কিংবা একবারেই পাবে না। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তারা কিছু আসন পাবে। এ জন্য তারা পিআর পদ্ধতির বিষয়ে বেশি আগ্রহী।’

 

যে কারণে পিআর চায় না সংস্কার কমিশন

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার কমিশন নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতির পক্ষে নয়। এই কমিশনের সুপারিশ—সরাসরি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট, অর্থাৎ ফাস্ট পাস্ট দ্য পোস্ট (এফপিটিএফ) নির্বাচনী পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সদস্যদের মাধ্যমে নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। কমিশন এফপিটিএফ পদ্ধতি সুপারিশ করছে; কারণ এটি স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে, যা আমাদের মতো একটি নাজুক গণতন্ত্রের স্থায়িত্ব ও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এই সুপারিশের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে—‘কমিশন নিম্নকক্ষের সদস্যদের নির্বাচনের জন্য এফপিটিপি পদ্ধতি অনুসরণ করার সুপারিশ করছে। এফপিটিপি পদ্ধতি একক দলীয় সরকার এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে। এর বিপরীতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি প্রায়ই ঝুলন্ত সংসদ, জোট সরকার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ নেপাল ২০১৫ সালের নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্মুখীন হয়েছে। গত ৯ বছরে দেশটিতে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষ গঠনের ফলে একটি দুর্বল ও বিভক্ত সংসদ সৃষ্টি হয়েছে, যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ। আমাদের মতো ভঙ্গুর গণতন্ত্রে বারবার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলা করা কঠিন। এ কারণেই এফপিটিপি পদ্ধতি প্রস্তাব করা হয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ও কার্যকর শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।’

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও পিআর পদ্ধতির ভালো ও মন্দ উভয় দিক উল্লেখ করে এ সম্পর্কে কোনো সুপারিশ করা থেকে বিরত থাকাই উত্তম মনে করা হয়েছে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পিআর পদ্ধতির নেতিবাচক দিক সম্পর্কে এই মর্মে বলা হয়েছে যে এর একটি বড় দুর্বলতা হলো সরকারের সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা। বাংলাদেশের তুলনামূলকভাবে কম বিতর্কিত পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর ভোট প্রাপ্তির হার এবং সে অনুসারে পিআর পদ্ধতিতে বণ্টনযোগ্য আসনসংখ্যা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে উল্লিখিত চারটি নির্বাচনে যেহেতু কোনো দলের পক্ষেই এককভাবে সরকার গঠন করা সম্ভব হতো না, তাই বড় দলগুলো ক্ষুদ্র দলগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে যেতে পারত এবং ‘টিরানি অব দ্য স্মল মাইনরিটি’ বা ছোটদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারত। এ ছাড়া সরকার গঠনে ভাঙাগড়ার খেলা প্রকট হয়ে উঠতে পারত। এমনকি সরকার গঠনে লেনদেনের প্রভাবও ঘটতে পারত। এ ছাড়া সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে দলের আধিপত্য বেসামাল পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।’

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, ‘সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির আরো অনেক দুর্বলতা রয়েছে, যা অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় উঠে এসেছে। মতবিনিময়ের সময় একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে যে অনেক ব্যক্তি ও দল, যারা নীতিগতভাবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে, তাদের অনেকেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটির প্রবর্তনের বিপক্ষে। তাদের আশঙ্কা যে বর্তমান সময়ে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি গৃহীত হলে বিতাড়িত স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের আশঙ্কা দেখা দেবে।’

(এই প্রতিবেদনটিতে কালের কণ্ঠ থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট