বাঙ্গালীর বার্তা: সহজে ও সুলভে ওষুধ প্রাপ্তি এবং চিকিৎসা ব্যয় কমানোসহ নানাবিধ বিষয় আমলে নিয়ে সরকারি উদ্যোগে সারাদেশে ফার্মেসি করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বড় ধরনের একটা পরিবর্তন আসবে। এ জন্য প্রয়োজন বাজেট প্রাপ্তি ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ।
মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত পুরো পরিকল্পনা করে ফেলেছে সরকার। এখন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন অর্থ। প্রাথমিক পরিকল্পনায় সারাদেশে সরকারি ৭০০ হাসপাতালে এই ফার্মেসি করার বিষয়টি আছে। এর মধ্যে ৪২৯টি উপজেলা হাসপাতাল, ৫৯টি জেলা বা সদর হাসপাতাল, ৩৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ২১টির মতো বিশেষায়িত হাসপাতালে এসব ফার্মেসি হবে। যেখানে থাকবে একেবারেই প্রয়োজনীয় সব ওষুধ। এসব ফার্মেসি সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। পাশাপাশি বেসরকারি ফার্মেসিগুলোও চলবে।
প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি করে ফার্মেসি থাকতে হবে বলে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা মনে করছেন। তারা বলছেন, অভিজ্ঞ কিংবা প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্টদের এসব ফার্মেসিতে নিয়োগ দিতে হবে। যে কোনো প্রয়োজনে যে কোনো সময়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী বা হাসপাতালের বাইরের মানুষ যেন ওষুধ পান, এ জন্য হাসপাতালের ফার্মেসিগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকতে হবে। এসব ফার্মেসি থেকে রোগীকে বিনামূল্যে অত্যাবশ্যকীয় সব ওষুধ দিতে হবে। এসব ফার্মেসি থেকে ওষুধ বিতরণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুসরণ বা নজরদারি করতে হবে। এর ফলে ওষুধ ব্যবহারের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে এবং ওষুধ চুরি বা অপচয় রোধ করা যাবে বলেও সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে এর আগে সরকারি উদ্যোগে ফার্মেসি করার পরিকল্পনা না হলেও কিছু হাসপাতালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘এসেনশিয়াল ড্রাগস’-এর ফার্মেসি আছে। অভিযোগ আছে, বেশির ভাগ সময়ে সেখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না কিংবা থাকলেও দেওয়া হয় না।
জানা গেছে, পাশর্^বর্তী দেশ ভারতেও ‘জন ঔষধি কেন্দ্র’ নামে সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত ফার্মেসি রয়েছে, যেখানে সস্তায় জেনেরিক ওষুধ বিক্রি হয়। সারাদেশে ১০,০০০-এর ওপরে ওষুধ বিক্রয়কেন্দ্র আছে, যেখানে উচ্চমানের ওষুধ কম দামে বিক্রি হয়। শ্রীলংকায়ও সরকারি মালিকানাধীন এমন প্রতিষ্ঠান রযেছে স্টেট ফার্মাসিউটিক্যালস করপোরেশন নামে। এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হাসপাতাল ও ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহই করে না, দেশে ওষুধের মূল্যও নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া ব্রাজিল, কিউবা, যুক্তরাজ্যসহ আরও বেশকিছু দেশে এমন উদ্যোগ রয়েছে।
বিশিষ্টজনরা মনে করেন, বাংলাদেশেও এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। কিন্তু দেশের সার্বিক বাস্তবতায় এর বাস্তবায়ন হবে কঠিন কাজ। তবুও দেশকে গড়তে হলে চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে। তারা মনে করেন, এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিস্ট নিয়োগসহ বিরাট সংখ্যক জনবল নিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, যথাযথ ওষুধ সরবরাহ এবং গ্রাহকের কাছে নিয়মমাফিক পন্থায় পৌঁছানো ইত্যাদি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এসব বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
এ উদ্যোগের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের পরিকল্পনা সম্পন্ন। অপেক্ষা বাস্তবায়নের। তিনি বলেন, এখানে বাজেটের বড় একটা ইস্যু আছে। নিজস্ব তহবিল ও অন্যান্য তহবিল জোগানের ব্যাপার আছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবায়নের বিষয়টি অর্থের জোগানের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে করতে হবে। কতগুলো ফার্মেসি দিয়ে শুরু হবে, কোন শহরে করা হবে এই পরিকল্পনাও সম্পন্ন। কিন্তু বাস্তবায়ন নির্ভর করছে আর্থিক বিষয়ের ওপর। বাজেটে বরাদ্দ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা আসার পর বাকি কাজে যাওয়া হবে। বেসিক পয়েন্ট হচ্ছে, যে পরিমাণ অর্থ জোগান হবে সেই পরিমাণের কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, বাজেটে বরাদ্দ এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে নতুন কিছু বলা যাচ্ছে না। এতটুকু দৃঢ়ভাবে বলা যায়, সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এবং কাজটি শুরু করে যাবে।