বাঙ্গালীর বার্তা: ঢাকার বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৩ আসামির ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।আজ সোমবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো.ছানাউল্যাহ এই রিমান্ড আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন, আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)।
রিমান্ড শুনানিতে বিচারক বললেন, ‘হিরোজম দ্যাখাইতে গিয়ে ওরা পরিবারকে বিপদে ফেলছে। আর নিজেরা জিরো হয়েছে। ওদের (আসামিদের) তো কোনো ক্ষতি নাই। ক্ষতি ওদের বাবা-মায়ের।’
মামলার কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক এ কে এম মঈন উদ্দিন আজ ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম মেধাবী ছাত্র। তাকে কিভাবে হত্যা করা হলো। মর্মান্তিক ঘটনা। কেউ মেনে নিতে পারছে না। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা। এদের হায়ার করে আনা হয় খুনের জন্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহিরাগত ছাত্র এনে আক্রমণ করে। এটা নেক্কারজনক ঘটনা। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। এভাবে ছুরি মেরে তাকে হত্যা করতে হবে? এরাও কারো না কারো মায়ের সন্তান। ছেলেদের কাঠগড়ায় দেখে তাদের কি অবস্থা হচ্ছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার মাস্টার মাইন্ডরা বের হয়ে আসবে।’
শুনানিতে আসামি কামালের আইনজীবী লুৎফর রহমান বলেন,‘কামাল বাঙলা কলেজের ছাত্র। বনানী এলাকায় থাকে না, যাতায়াতও নেই। একটা দোকানের কর্মচারী। ঘটনার সময় সেখানেই কর্মরত ছিলো। ঘটনাস্থলের একজন তাকে ফোন দেয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। ওই ফোনের কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আসামি আলভি এবং সানির আইনজীবী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরাও দু:খ প্রকাশ করছি। একটা তাজা প্রাণ চলে গেছে। যারা জড়িত তাদের বিচার হোক। যারা জড়িত না তারা যেন ন্যায় বিচার পায়। তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না, দূরে ছিলেন।’
এসময় বিচারক বলেন,‘ফোন কলে গেছেন। তার মানে ওরা বর্হিরাগত। কেন গেছে ওখানে?’ তখন আইনজীবী বলেন,‘ঘটনাস্থলে যাইনি। দূরে ছিল। তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। তাই খোঁজ নিতে গিয়েছিল।’ এসময় বিচারক বলেন, ‘তারা যে ভর্তি হতে গিয়েছিল, এমন কোনো ডকুমেন্ট আছে?’ তখন আইনজীবী বলেন,‘এখন তেমন কিছু নাই।’ তখন বিচারক বলেন,‘হিরোজম দ্যাখাইতে গিয়ে ওরা পরিবারকে বিপদে ফেলছে। আর নিজেরা জিরো হয়েছে। ওদের (আসামিদের) তো কোনো ক্ষতি নাই। ক্ষতি ওদের বাবা-মায়ের। ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতি হয়। প্রতিষ্ঠানের লোকজন এনে মিউচ্যুয়াল করে দিল। ফোন করে অন্যদের ডেকে এনে খুনের ঘটনা ঘটাল।’ এ সময় আইনজীবী বলেন,‘আমরাও চাই বিচার হোক।’ এরপর আদালত তাদের ৭ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে আসামিরা বলেন,‘আমরা কাউকে মারিও নি, ধরিও নি। ভিডিও আছে, সমস্যা নাই। আমরা মারামারি করিনি, ভিডিওতে নাই। কাহিনী ছিল অন্যজনকে নিয়ে। যারা মারছে তাদের না ধরে আমাদের ধরছে।’
এরআগে গত ২০ এপ্রিল মধ্যরাতে মহাখালীর ওয়ারলেছ গেইটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ১৯ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টায় ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে জাহিদুল ইসলাম পারভেজের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয় তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর। এক পর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে মীমাংসার জন্য বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ২২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।