বাঙ্গালীর বার্তা: শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর. আবরারের পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয়ের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার শব্দ শোনা গেছে। ছোড়া হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের শেলও।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকাল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে এই ঘটনা ঘটে।
সচিবালয়ের ভেতর ঢুকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, লাঠিচার্জ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তবে এখনো সচিবালয়ের আশপাশে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এর আগে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গেটের বাইরে অবস্থান করছিলেন।
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য প্রকাশের দাবিতে এবং মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণায় দেরি করার কারণে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা।
অবশ্য শিক্ষা উপদেষ্টা পদত্যাগ না করলেও শিক্ষা সচিবকে অপসারণ করেছে সরকার। তবে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে অনঢ় থেকে সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থান নেন; তাদের স্লোগান দিতে শোনা যায়।
প্রথমে তারা সচিবালয়ের তিন নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে বাকি গেটগুলোও বন্ধ করে দেন তারা। এক পযার্য়ে একটি গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়তে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। ভেতরে পুলিশ সদস্যদেরও দেখা যায়। তারা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন।
সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের হঠাতে বিশেষ টিম নামানো হয়েছে। গেটগুলো বন্ধ করে নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কোনো বাধা নেই, কিন্তু প্রশাসনিক এলাকায় অনাধিকার প্রবেশ ও বিশৃঙ্খলা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
ঘটনার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই শিক্ষার্থীদের সাহসিকতা ও প্রতিবাদের ভাষাকে সমর্থন করছেন। অন্যদিকে, সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা ভেদ করে ঢুকে পড়া নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ে একাধিক বৈঠক চলছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে জরুরি ঘোষণাও আসতে পারে বলে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানা গেছে।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে সচিবালয়ের সামনে আসেন তারা।
ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরো কিছু শিক্ষার্থী এই ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে হতাহতের ঘটনায় এদিনের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে গভীর রাতে। এতে অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর পৌঁছাতে পারেনি। অনেকে এদিন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পৌঁছেও যান সময়মতো। এসব বিষয় নিয়ে ক্ষোভে ফেটে সচিবালয়ে জড়ো হতো থাকেন শিক্ষার্থীরা।